২৯ জুন ২০২৫, রবিবার, ১০:৪৮:১৩ অপরাহ্ন
আ. লীগ সরকারের করা বিধিমালা গ্রহণের আদেশ স্থগিত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৬-২০২৫
আ. লীগ সরকারের করা বিধিমালা গ্রহণের আদেশ স্থগিত

সাত বছর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের করা অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। সেই আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।


এসংক্রান্ত রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ রবিবার (২৯ জুন) এই আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে সাত বছর আগের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।


আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আদেশর পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের করা বিধিমালার প্রজ্ঞাপন গ্রহণ করে ২০১৮ সালে ৩ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে।


তবে আদালত বলেছেন, ২০১৭ সালের বিধিমালাটি আপাতত কার্যকর থাকবে। সেই সঙ্গে এই বিধিমালা সংক্রান্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন রিটের শুনানিও চলবে। তিনি জানান, রিভিউ আবেদনটি লিভটু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) গণ্য করে তা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর ফলে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পেয়েছেন আবেদনকারীরা।

আপিল করার পর এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।

বিধিমালার পূর্বাপর 

আলোচিত মাসদার হোসেন মামলায় চূড়ান্ত শুনানির পর ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে (জেএসসি) স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য ওই রায়ে সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ।


মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।


পরে ২০১৬ সালের ৭ মে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে ওই বছর ২৮ আগস্ট শুনানিতে বলেন আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান সুপ্রিম কোর্ট। সংশোধিত খসড়াটি চূড়ান্ত করে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়। এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকারের সঙ্গে আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে থাকে। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই সেই বিধিমালার কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় হয়। এই রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়েন। ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তখন প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেওয়া হয় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞাকে। ওই বছর ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুর, নিয়ন্ত্রণ শৃঙ্খলা বিধান) বিধিমালা, ২০১৭ নামে শৃঙ্খলা বিধিমালার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে সরকার। 

২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপনটি গ্রহণ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর পর থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা এই বিধিমালা অনুসারেই হয়ে আসছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি বিধিমালার প্রজ্ঞাপন গ্রহণ করে আপিল বিভাগের দেওয়া আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আট আইনজীবী। গত বৃহস্পতিবার এই আবেদনে শুনানির পর আজ আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। 


শেয়ার করুন