ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বরিশাল আসা যুবক প্রেমকান্তের (৩৬) ওপর আক্রমণের পুরো ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি পুলিশ। পুরো ঘটনাই ছিল সাজানো, মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে জানায় পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেখা করতে আসা কিশোরীর সঙ্গে গাড়িতে বসে খারাপ আচরণ করায় দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হলে স্থানীয়রা সেটি সমাধানের চেষ্টা চালায়। দেখা হওয়ার পরপরই তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় সম্পর্কের অবনতি হয় তাদের।
পরে প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটিও হয়। এ সময় তাদের দুজনের বহনকারী গাড়িটি থামিয়ে দেয় স্থানীয়রা। একই সঙ্গে বিষয়টি বিমানবন্দর থানায় অবহিত করে। সেখান থেকে পুলিশ এসে প্রেমকান্তকে হেফাজতে নেয়।
প্রেমকান্তের এসব অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে জানিয়েছেন পুলিশ। এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেশ হালদার বলেন, ‘প্রেমকান্তের অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্তে তার করা অভিযোগ অসত্য বলে উঠে এসেছে। কাশিপুরের সড়কে যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলছেন সেখানে ওই যুবকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। তাকে কেউ মারধর করেনি। ’
ওসি আরো বলেন, ‘প্রেমকান্ত নামক ওই যুবক বারবার আমাকে বলছিলেন সেই তরুণীকে তার সঙ্গে দিয়ে দিতে। অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীর বিয়ে বাংলাদেশে আইন পরিপন্থী কাজ বলার পরও একই দাবি করছিলেন। হাইকমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক তাকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর তিনি ঢাকায় না গিয়ে শহরে চলে আসেন। ’
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বন্ধুত্ব। পরে ২৪ জুলাই প্রেমকান্ত বরিশালে চলে আসেন। ২৫ জুলাই একটি রেস্তোরাঁয় ওই কলেজছাত্রী তার তিনজন বান্ধবীসহ দেখা করে। এমনকি দুপুরের খাওয়া শেষে চলে যায়। ২৭ জুলাই প্রেমকান্তের অনুরোধের কারণে কাশিপুর এলাকায় দুজন দেখা করে। সেখানে চলমান অটোরিকশার মধ্যে বসে তারা কথা বলছিল। একপর্যায়ে প্রেমকান্ত ওই ছাত্রীকে খারাপ সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করেন। কলেজছাত্রী প্রেমকান্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে দুজনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। একপর্যায়ে তা উচ্চ স্বরে ঝগড়ায় রূপ নেয়। এ সময় তাদের দুজনের বহনকারী গাড়িটি থামিয়ে দেয় স্থানীয়রা। একই সঙ্গে বিষয়টি বিমানবন্দর থানায় অবহিত করে। সেখান থেকে পুলিশ এসে প্রেমকান্তকে হেফাজতে নেয়।
প্রেমকান্তের কথিত প্রেমিকা কলেজছাত্রী দাবি করেছেন, ‘ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। আমি তার প্রেমিকা নই। আসলে তার কথায় রাজি না হওয়ায় আমার ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি মিডিয়ায় আমার সম্মান নষ্ট করতে বক্তব্য দিয়েছে। ’
কলেজছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক, তা এয়ারপোর্ট থানার ওসি নিজে কলেজে এসে নিশ্চিত হয়ে গেছেন। সেই তথ্য হাইকমিশনে জানালে ওই যুবককে দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সে দেশে না ফিরে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, আমার পরিবার নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এমনকি সেসব অপপ্রচার সে টেলিভিশন-পত্রিকাতেও বলছে। ফলে আমি আমার পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকব তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেই যুবকের মিথ্যা তথ্যে আমরা মারাত্মক ক্ষতিতে রয়েছি। আমরা এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ’
প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগ ওঠায় এ ব্যাপারে আইনি সহযোগিতা চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে ছাত্রীর পরিবার।
তালতলী থানার ওসি আলী আহম্মদ বলেন, ‘প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে কুপ্রস্তাব প্রদানের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যদি এমন ঘটনা তিনি ঘটান তা অবশ্যই অপরাধ। আমরা অভিযোগটির তদন্ত করছি। ’
জিডির বরাতে ওসি বলেন, মেয়েটির বাবা অভিযোগ করেছেন তার মেয়েকে প্রেমকান্ত অশালীন প্রস্তাব দিয়ে ঢাকা নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। মেয়ে এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রেমকান্ত তালতলী চলে যান। ওই যুবক তার মেয়ের যেকোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারেন। তিনি তার মেয়ের নিরাপত্তা চান।
তবে, সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে প্রেমকান্ত বলেন, তালতলী থানায় যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, আসলে এমন কোনো আচরণ আমি করিনি। তার সঙ্গে হোটেলে, কলেজে এবং কাশিপুর চৌমাথায় দেখা হলেও খারাপ কোনো প্রস্তাব দেইনি।