১৭ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার, ০৫:৫৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে মুসলিম বিশ্বের ৩১ দেশের নিন্দা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৫
নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মন্তব্যে মুসলিম বিশ্বের ৩১ দেশের নিন্দা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথিত 'গ্রেটার ইসরায়েল' মন্তব্যের বিরুদ্ধে একযোগে নিন্দা জানিয়েছেন আরব ও ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীদের ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বিভক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিন্দা জানান তারা।


শনিবার (১৬ আগস্ট) যৌথ বিবৃতিতে ৩১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) প্রধানরা এই নিন্দা জানান।


সৌদি প্রেস এজেন্সির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রীপরিষদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের এক নির্লজ্জ ও বিপজ্জনক লঙ্ঘন এবং এটি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে সরাসরি হুমকি।


বিবৃতিতে সই করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে - সৌদি আরব, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিশর, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন। এছাড়া আরব লীগ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা  এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের মহাসচিবরাও বিবৃতিতে যুক্ত ছিলেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জাতিসংঘ সনদের ২ নম্বর অনুচ্ছেদ, ৪ নম্বর প্যারাগ্রাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'যেখানে বলপ্রয়োগ বা বলের হুমকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে আমরা শান্তি রক্ষায় সকল নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করব, যা সকল রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করবে।'


তারা ইসরায়েলি কট্টরপন্থী মন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের পশ্চিম তীরের তথাকথিত 'ই ওয়ান' এলাকায় বসতি পরিকল্পনার অনুমোদন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতামূলক বর্ণবাদী বক্তব্যেরও তীব্র প্রতিবাদ জানান।


পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের 'আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের অপরাধ' এর নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত পরিকল্পিত অনাহার নীতির অবসান ঘটাতে নিঃশর্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানান তারা।


এদিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোও এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জার্মানি সতর্ক করে বলেছে, 'ই ওয়ান' বসতি এবং মা’আলে আদুমিম সম্প্রসারণ পশ্চিম তীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফিলিস্তিনিদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করবে এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।


তারা সতর্ক করে বলেন, 'ইসরায়েলের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, ফিলিস্তিনিদের, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকারকে অগ্রাহ্য করছে। এটি  সরাসরি সহিংসতা ও সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে এবং ন্যায়সঙ্গত ও বিস্তৃত শান্তি অর্জনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে।'


প্রসঙ্গত, যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।


গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।


শেয়ার করুন