১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:২৮:২৪ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে থানা থেকে জব্দ করা মোটর বাইক গায়েব
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৮-২০২২
রাজশাহীতে থানা থেকে জব্দ করা মোটর বাইক গায়েব

রাজশাহীর তানোর থানায় জব্দ করা একটি মোটর সাইকেল আর পাওয়া যাচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। আর যে উপপরিদর্শক (এসআই) মোটরসাইকেলটি আটক করেছিলেন, তিনি এখন অন্য থানায় বদলি হয়ে গেছেন।

তবে ওই এসআই এ বিষয়ে বলছেন, মোটরসাইকেল জব্দের বিষয়ে থানার ওসির অনুমতি নিয়ে জিডি করা আছে। তিনি সবই জানেন।

এ ঘটনায় মোটর সাইকেলের মালিক রাজশাহীর পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এসপি এক দিনের মধ্যে মোটর সাইকেলটি বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মোটর সাইকেলটির মালিকের নাম বেলাল হোসেন (৩৯)। তাঁর বাড়ি তানোর পৌর এলাকার বুরুজ মহল্লায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি মোটর সাইকেল চালিয়ে কাশিমবাজার থেকে তানোর সদরে যাচ্ছিলেন। জিওল-চাঁদপুর নামক মোড়ে মোটর সাইকেলের সঙ্গে মনজিলা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে মনজিলা সামান্য আহত হন। পরে বেলাল হোসেন তাঁকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। এরই মধ্যে তানোর থানার পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মোটর সাইকেলটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর থেকে আহত ব্যক্তির সঙ্গে মোটর সাইকেলের মালিক মীমাংসার চেষ্টা করছিলেন। মীমাংসা না হওয়ার কারণে তিনি মোটর সাইকেল নিতে যাননি। তবে মাঝেমধ্যেই থানায় গিয়ে মোটর সাইকেল দেখে আসেন। গত ২৪ জুন সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় কাউন্সিলর মুনজুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিস হয়। এতে চিকিৎসা খরচ বাবদ আরও ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি আপস-মীমাংসা করা হয়।

বেলাল হোসেন জানান, কাউন্সিলরের মীমাংসাপত্র নিয়ে ওই দিন (২৪ জুন) দুপুর ১২টার দিকে থানায় যান। সঙ্গে তানোর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মমেনা আহম্মেদ ও তাঁর ভাই আলফাজ উদ্দিন ছিলেন। এ সময় বেলাল হোসেন মোটর সাইকেলটি ফেরত দেওয়ার জন্য ওসি কামরুজ্জামান মিয়াকে অনুরোধ জানান। এ সময় ওসি তাঁকে বলেন, দারোগা মানিক থানায় নেই। অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। মোটরসাইকেলটি নিতে চাইলে মানিককে নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া তিনি মোটরসাইকেলের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

ওই সময় বেলাল হোসেন ওসিকে বলেন, থানা চত্বরেই তিনি তাঁর মোটরসাইকেলটি দেখতে পাচ্ছেন। এ কথা বলার পর ওসি তাঁকে বলেন, ‘ঠিক আছে খোঁজখবর নিয়ে দেখি ১৫ দিন পরে আসেন।’

বেলাল হোসেন বলেন, ওসির কথামতো ১৫ দিন পরে থানায় গিয়ে মোটরসাইকেলটি থানা চত্বরে আর দেখতে পাননি। এ বিষয়ে জানতে গেলে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে বলেন, ‘এসআই মানিককে নিয়ে এসে মোটরসাইকেল নিতে হবে। আমি এ বিষয়ে কোনো কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মোটরসাইকেলটি চিরতরে হারাবে বলে হুমকি দেন।’

বেলাল হোসেন জানান, ওসি তাঁকে থানা থেকে অপমান করে বের করে দেন। নিরুপায় হয়ে গতকাল সোমবার পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এ সময় পুলিশ সুপার ছিলেন না। অন্য একজন পুলিশ সদস্য অভিযোগটি গ্রহণ করেন।

তানোর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মমেনা আহম্মেদ বলেন, দুর্ঘটনায় আহত নারীর সঙ্গে মীমাংসার পর বেলালের সঙ্গে তিনি মোটরসাইকেলটি নেওয়ার জন্য থানায় গিয়েছিলেন। ওসি সাহেব তাঁদের ১৫ দিন পরে যেতে বলেছিলেন। পরেরবার তিনি আর থানায় যাননি।

মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, মোটর সাইকেলটির ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। উল্টো আরও এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান যে অভিযোগ করার বিষয়টি প্রতিবেদক কার কাছ থেকে জেনেছেন।

তবে তানোর থানার তৎকালীন এসআই মানিক বর্তমানে সিরাজগঞ্জের একটি থানায় বদলি হয়ে গেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওসির অনুমতি নিয়েই তিনি মোটরসাইকেলটি জব্দ করে নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করেন। দুই পক্ষ মীমাংসা করে নিতে চান তাই মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকায় তোলা হয়নি।

ওসি তখন বলেছিলেন মীমাংসা হলে আরেকটি জিডি করে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেওয়া যাবে। মঙ্গলবার ওসি ফোন করেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওসি তাঁকে ফোন করে মোটর সাইকেল কোথায় আছে, বের করে দিয়ে আসতে বলেছেন। তিনি বলেন, দাপ্তরিক বার্তা পেলেই তিনি যাবেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, তিনি অসুস্থ। বিষয়টি শুনেই আজকেই এসে মানিককে মোটরসাইকেলটি বের করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

শেয়ার করুন