বরিশালের গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব সমরসিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএম ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর মা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের কাছে বিচার দিয়ে কোনো প্রতিকার পাননি। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও অন্য শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নিপীড়নের শিকার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী জানান, স্কুলে ছাত্রীর ছবি লাগবে এ কথা ছাত্রীর মাকে বলে ছবি তোলার জন্য গত ৩ মাস পূর্বে ওই প্রধান শিক্ষক স্কুল বন্ধের দিন ছাত্রীকে বাকাই বাজারে ডেকে নেন। এ সময় বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে ডাসার কলেজ ক্যাম্পাসে যান। ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবকারী এক যুবকের সঙ্গে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই ছাত্রী একাধিক ছবি প্রধান শিক্ষক তার মোবাইল ফোনে তোলেন।
এরপর থেকে স্কুলে ক্লাস বিরতির সময় প্রধান শিক্ষক প্রায়ই তাকে স্কুল ভবনের দোতলায় তাদের ক্লাসরুমে ডেকে নিয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এসব ঘটনা ছাত্রী কাউকে জানালে তাদের ওই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ও তাকে স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হবে বলে তাকে ভয়ভীতিসহ হুমকি দিতেন প্রধান শিক্ষক। পরে ওই ছাত্রী বিষয়টি স্কুলের সহকারী তিন শিক্ষককে এবং তার দাদি ও মাকে জানায়।
যৌন নিপীড়নের শিকার অপর এক ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমার মেয়েকে শ্লীলতাহানির ঘটনা আমাকে জানালে আমি মেয়েকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই। এরপর আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমি একদিন স্কুলে যাই। এ সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ২ সদস্যের উপস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষকদের কাছে বিচার দেই। এ সময় আমি মোবাইল ফোনে বিষয়টি সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমানকে জানাই। অন্য শিক্ষকদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মেয়েকে আবার নিয়মিত স্কুলে পাঠাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের একাধিক শিক্ষক জানান, এক ছাত্রীর উপস্থিতিতে তার মার কাছ থেকে অভিযোগ শুনে সভাপতি ও শিক্ষকরা পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে প্রধান শিক্ষকের পাঠদান বন্ধ করে দেয়। এরপর দোতলা থেকে ৫ম শ্রেণির ক্লাসরুম নিচতলায় শিক্ষকদের লাইব্রেরির কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ও ভিত্তিহীন দাবি করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএম ইউনুস আলী বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য স্কুলের ২/১ জন শিক্ষক ও পঞ্চম শ্রেণীর কতিপয় শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য এ প্রতিনিধিকে ওই শিক্ষক অনুরোধ করেন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার চুন্নু ফকির বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুশান্ত কুমার বকশী জানান, ২ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে ক্লাসে পড়া না পারায় এক ছাত্রীকে বকাঝকা দেন প্রধান শিক্ষক। ওই বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
যৌন নিপীড়নের শিকার এক ছাত্রীর ও অপর এক ছাত্রীর মা শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ দেওয়ার অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছেছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।