১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:২৪:৫২ অপরাহ্ন
রামেকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দুষলো রাবি প্রশাসন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
রামেকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকে দুষলো রাবি প্রশাসন

 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিবৃতিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নগরীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের মুখোমুখি অবস্থান সৃষ্টির পেছনে ‘হাসপাতালের কতিপয় ব্যক্তির অসহিষ্ণু ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’কে দায়ী করা হয়। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে এই বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় শাহরিয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে তাকে আইসিইউতে না পাঠিয়ে ৮ নং ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এসময় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা আধঘণ্টা বিলম্ব করে এসে তারা শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করলে হতবিহ্বল সহপাঠীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এসময় হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্টাফরা মেডিকেলে ব্যবহৃত ছুরি-কাঁচি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থীদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে যায়। কিন্তু হাসপাতালের কতিপয় ব্যক্তির অসহিষ্ণু ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

এই ঘটনায় শাহরিয়ারের মৃত্যু তদন্তে কমিটি গঠন ও মতিহার থানায় অপমৃত্যুর মামলা করে প্রশাসন। পাশাপাশি ঘটনার রাতেই নগর পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রামেক কর্তৃপক্ষ ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভা আহ্বানের পূর্বেই রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ২০ অক্টোবর রাবির ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।

অন্যদিকে, রাজশাহী সদর আসনের এক জনপ্রতিনিধি শাহরিয়ারকে হত্যা করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষার্থীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ হাসপাতালে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে অমূলক তথ্য প্রদান করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেন।

জনপ্রতিনিধির এমন বাস্তবজ্ঞানহীন ও উষ্কানিমূলক বক্তব্য কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়। তাঁর বক্তব্য পরিস্থিতি শান্ত করার চেয়ে তা আরো জটিল করেছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে এবং ঘটনার খন্ডিত অংশকে ব্যবহার করে তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, সমগ্র দেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে বিব্রত করেছেন।

বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়, শাহরিয়ার যদি পূর্বেই মারা গিয়ে থাকে তবে তার লাশ জরুরি বিভাগ থেকে লাশঘরে না রেখে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হলো কেন? তার শরীরে কেন স্যালাইন পুশ ও অক্সিজেন দেয়া হলো? শাহরিয়ারের লাশ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পরিবার স্বেচ্ছায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রহণ করে। ডাক্তাররা যদি নিশ্চিতই থাকেন যে শাহরিয়ারকে হত্যা করা হয়েছে, তবে কেনো বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করলেন? লাশ হস্তান্তরের দায়দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসাপ্রার্থী অসহায় মানুষদের প্রতি রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, নার্সসহ স্টাফদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা-মারধরের ঘটনা মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে সেগুলোপ্রকাশিত হয়। একজন চিকিৎসাপ্রার্থীর সাথে কোনো চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের অসংগত আচরণ কখনোই কাম্য নয়।

জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, রাবি ও রামেক হাসপাতাল কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। উভয়পক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৌহাদ্যপূর্ণ নিরসন করা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।

শেয়ার করুন