দেশের ৩২টি জেলার মানুষ নিপা ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি শয্যা প্রস্তুত করে রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এ বছর শীত মৌসুমে দেশের ৬টি জেলায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ৯ জনকে শনাক্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আইডিসিআর বলছে, ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের ৩৩টি জেলায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা.মুশতাক হোসেন শনিবার বলেন, কোনো জায়গায় একবার নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ওই স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
“কারণ যেখানে নিপা ভাইরাসের রোগী পাওয়া যায় সেখানে বাদুরও থেকে যায়, খেজুরের রসও থাকে। দেশের সব এলাকাই নিপা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সেসব জেলায় পাওয়া গেছে সেসব জেলায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।”
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদ্প্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনানের স্বাক্ষরে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। জ্বরের পাশাপাশি রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে।
নিপা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না বলে জানিয়েছ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে এক সভা শেষে জানিয়েছেন, চলতি শীত মৌসুমে দেশে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিপা ভাইরাস আক্রান্তদের ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
পরদিন সোমবার নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করে রাখার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদ্প্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম শনিবার জানান, এ বছর রাজবাড়ী, নওগাঁ, রাজশাহী, শরীয়তপুর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় রোগী পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, নিপিা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে।
“এই রোগের কোনো টিকা নেই। প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। যারা বেঁচে যান তারা শারীরিক বৈকল্য নিয়ে বেঁচে থাকেন। রোগীর সংখ্যা হয়ত বেশি না, কিন্তু যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছেন। এ কারণে আমরা চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে বলছি,” বলেন তিনি।
ডা. নাজমুলের পরামর্শ, কাঁচা খেজুরের রস কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। কাঁচা খেজুর রসের বিক্রি, বিপণন এবং প্রচারও যেন না করা হয়।