১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন
অবশেষে ১০ লেনের পরিকল্পনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০২-২০২৩
অবশেষে ১০ লেনের পরিকল্পনা

চলতি বছরই শুরু হচ্ছে কাজ ♦ থাকবে না ইউটার্ন যানজটের স্থানগুলোয় ওভারপাস-আন্ডারপাস ♦ ধাপে ধাপে বাড়বে লেন ♦ ১ বিলিয়ন ডলার দেবে এআইআইবি

চার লেন থেকে প্রশস্ত করে ১০ লেন করা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। প্রকল্পে অর্থায়নে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। চলতি বছরই সরকার এ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্ত করে ১০ লেন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব-ডিপিপি তৈরি করে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্ল্যানিং কমিশন সভা করে এ প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থ সংস্থান করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এ প্রকল্পে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। কাজ শুরু হলে তারা আরও অর্থায়ন করবে। পাশাপাশি এ রাস্তা প্রশস্তকরণের ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় কনসালট্যান্ট নিয়োগের কাজ শুরু করেছি। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি সড়কের একটা অংশের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে এ বছরই কাজ শুরু করব। আমাদের পরিকল্পনা থাকবে বর্তমান রাস্তা সচল রেখে পাশে দুই লেনের কাজ শেষ করার। তাহলে ছয় লেন চালু হয়ে যাবে। এরপর আরও দুই লেনের কাজ সম্পন্ন করে আট লেন হবে। এর পরে মূল সড়কে কাজ শুরু করব। আগে মূল সড়কে কাজ করলে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই ধাপে ধাপে লেন বাড়িয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েকে ১০ লেনের মহাসড়কে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী আরও বলেন, ‘এ রাস্তায় অনেক ওভারপাস, আন্ডারপাস, ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। আধুনিক টোল প্লাজা হবে। এখনকার মতো মান্ধাতা আমলের টোল প্লাজা থাকবে না। বিভিন্ন জায়গায় সংযোগসড়ক থাকবে। এ মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। চট্টগ্রাম বন্দর, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর সরাসরি এ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। দেশের অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় অন্যতম প্রধান মহাসড়ক এটি। এ মহাসড়ক উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁও পার হয়ে কুমিল্লা অংশে প্রবেশ করলে মনে হয় ঋতুরাজ বসন্ত যেন এখানেই স্থায়ী আবাস গড়েছে। কালো পিচঢালা মসৃণ সড়কের পাশে উজ্জ্বল রঙের আগুনঝরা পলাশ ফুলের আনাগোনা। এক কিলোমিটারের বেশি সড়কজুড়ে সারিসারি পলাশ গাছ। মাঝে মাঝে শীষ দুলিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে রাধাচূড়া। ঋতু পরিবর্তন হলে চোখে পড়ে জারুল, সোনালু, কাঞ্চনের শোভা। কিন্তু এসব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় অসহনীয় যানজটে। বিশেষ করে যেসব জায়গায় ইউটার্ন, কাঁচাবাজার, আড়ত কিংবা বাসস্ট্যান্ড আছে।

জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেটের দূরত্ব ২৩২ কিলোমিটার। দেশের মহাসড়কের ইতিহাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এ মহাসড়ক সংযুক্ত করেছে দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ শহরকে। মেঘনা-গোমতী টোল প্লাজার ম্যানেজার এস এম জামিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করে এ টোল প্লাজা দিয়ে। বৃহস্পতিবারে গাড়ির চাপ বাড়ে। ওই দিন প্রায় ২২ হাজার গাড়ি চলাচল করে।’ এ মহাসড়কের ১৫টি পয়েন্টে যানজট নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মদনপুর বাসস্ট্যান্ডের চারদিকের সড়কে গাড়ি চলাচল করতে প্রায়ই বাধছে যানজট। সরেজমিন দেখা যায়, এ বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় জেলাগুলোর যানবাহন চলাচল করছে। মদনপুর থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা বাইপাস সড়ক (এশিয়ান হাইওয়ে) ও মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়ক। বহুমুখী গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাকের চাপে প্রায়ই বাধছে যানজট। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাতায়াত করে হাজার হাজার ট্রাক। বাইপাস সড়কে ট্রাক-বাস ঢুকতে এবং বের হতে এক পাশের গাড়ি আটকালে মুহূর্তেই অর্ধশতাধিক বাস-ট্রাকের জটলা তৈরি হয়। দুর্ঘটনা ঠেকাতে সম্প্রতি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে। সোনারগাঁও মোড়ে যানজট দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গজারিয়া ভবেরচর বাজারে ইউটার্ন করতে গিয়ে যানজট তৈরি হয়। গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, নিমসার বাজারে পাইকারি আড়ত, কাঁচাবাজারের কারণে তৈরি হয় যানজট। যানজট এড়াতে সড়ক প্রশস্ত করে আন্ডারপাস, ওভারপাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘১০ লেনের সড়কে চার লেন থাকবে সরাসরি ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য। দুটি লেন থাকবে স্থানীয় গণপরিবহনের জন্য। অন্য লেনগুলো কাজে লাগিয়ে যানজট নিরসন করে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের পর সার্বিক ব্যয় নির্ধারণ করা হবে।’ অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট কমিয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। চার লেনের সড়ককে ১০ লেন করার পাশাপাশি উল্টোপথে আসা কিংবা ইউটার্ন নেওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত চার লেন, লোকাল বাস, গণপরিবহনের জন্য আলাদা দুই লেন করতে পারলে অল্প সময়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।’

শেয়ার করুন