রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন দিয়ার মানিক চক গ্রামের বাবুল আকতার বাবু ছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তার বাবা সানাউল্লাহ একই ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচতি হন। বাবুর বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গোদাগাড়ী থানায় রয়েছে ৪/৫টি মাদক মামলা।
সেই বাবুল আক্তার বাবুকে করা হয়েছে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ২১ জুলাই চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবলীগর সম্মেলনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বাবুল আকতার বাবুকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন।
এছাড়াও খাদিমুল ইসলাম ছিলেন, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের জামায়েতে ইসলামের সাথী (সদস্য)। বড় ভাই মৃত নাইমুল হক ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জামায়েতের রোকন। পুরো পরিবারই জামায়েতের রাজনীতির সাথে জড়িত। গত ১৫ জুলাই ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনে খাদেমুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।
খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী ঘটিতও একাধিক ঘটনা রয়েছে। সে তার নিজের বোনের শ্বাশুড়ীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে ধরা পড়ে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানো হয়। এছাড়াও ২০১৪-১৫ সালের দিকে বাসুদেবপুর ইউনিয়ন কাউন্সিরের পাশ্বে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্জে জড়ি পড়ে জনতার হাতে ধরা পরেন।
অপরদিকে, ১৮ জুলাই গোদাগাড়ী পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষাণা করা হয়েছে। এতে কাঠমিস্ত্রি সানাউল্লাহ সানাকে সভাপতি ঘোষণা করেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সে এক সময়ে ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য ছিলেন। তার বাবা সাজ্জাদ আলী ছিলেন, ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আর চাচা সামজাদ হোসেন বর্তমান ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। বড় ভাই রানা ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তার পরিবারের সদস্যরা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্ঠার আমিনুল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তার বাবা-চাচারা ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব:) শরীফ উদ্দিন গোদাগাড়ীর বাসায় আসলে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করেন।
সানাউল্লাহ সানারও বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। সে গোদাগাড়ী পৌরসভার কিশোর গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক গ্রুপ। ছিনতায়, ইভটিজিং. মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হওয়ায় ২০২১ সালের ১৮ জুন গোদাগাড়ী থানা পুলিশ তাকেসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেলা হাজতে পাঠিয়েছিল।
এছাড়াও গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে মাদক মামলার আসামী ছিনতাই, স্কুল শিক্ষার্থীকে সিগারের ছেঁকা দিয়ে নির্যাতন করা কিশোর গ্যাং সদস্য মেহেদী হাসানকে সহায়তা ও এক ছাত্রীকে অপহরণে সহযোগিতাসহ করায় র্যাব তাকে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়াও একটি মারামারি ঘটনায় তার নামে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা রয়েছে।
এভাবেই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের। যারা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত।
এছাড়াও গত ২২ জুন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন ইউনিটের সম্মেলন বা কমিটি করা যাবে না। এমনকি কোন কমিটি থেকে কাউকে বাদও দেয়া যাবে না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ রাজশাহী-১ আসসের সংসদ সদস্য দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অমান্য করে একের পর এক বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি ঘোষণা করে যাচ্ছেন।
এদিকে আগামী ৩০ জুলাই গোদাগাড়ী পৌরসভা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের সম্মেলন ডেকেছেন ফারুক চৌধুরী। সেখানে আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। গোদাগাড়ীতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে গত কয়েক বছরে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিপুল সংখ্যায় অনুপ্রবেশ করেছেন। আগামী ৩০ জুলাই তারাই কমিটিগুলোতে জায়গা পাবেন বলে আশঙ্কা করছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
একই অবস্থা তানোর উপজেলাতেও। জেলা কমিটির অনুমতি ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমতো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ এবং ছাত্রলীগের কমিটি করছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো মতামত নেয়া হচ্ছে না। এসব কমিটিতে বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই ফারুক চৌধুরী তানোরের পৌর এলাকায় একই মঞ্চ থেকে পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা দেন। এসব কমিটি ঘোষণার সময় মঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করতেই এসব কমিটি করা হচ্ছে বলে তিনি বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ জুলাই তানোরের কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে একাধিক কমিটি ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়াই কলমা ইউনিয়নকে পূর্ব ও পশ্চিম নামে দুই ভাগে বিভক্ত করে আওয়ামী লীগের দুটি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই মঞ্চ থেকে ইউনিয়ন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠনের কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, কলমা পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে আব্দুর রহিমকে। এই আব্দুর রহিমের পুরো পরিবার এলাকায় কট্টর আওয়ামী লীগবিরোধী পরিবার বলে পরিচিত। রহিম মাত্র কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন।
জানা গেছে, যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তার পক্ষের নয়, তারা নতুন কোনো কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন না। ফলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, ফারুক চৌধুরী সাংগঠনিক রীতিনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে একক সিদ্ধান্তে গণহারে কমিটি ঘোষণা করে তৃণমূলে দলকে বিভাজনের কাজটাই করছেন। এছাড়া কমিটি গঠনে ফারুক চৌধুরী বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকদের প্রাধান্য দিচ্ছেন।
তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন বলেন, গঠনতন্ত্রের কোথাও বলা নেই একই মঞ্চ থেকে একাধিক কমিটি ঘোষণা করা যাবে না। তিনি বলেন, কাউন্সিলররা সবাই উপস্থিত থাকছেন। তাদের মতামত নিয়ে এমপি সাহেব কমিটি ঘোষণা করেছেন।
কমিটি ঘোষণা প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি তাজবুল ইসলাম বলেন, তিনি এভাবে গণহারে সব সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করতে পারেন না। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা আছে। আবার এজন্য কাউন্সিলরও করতে হবে দলের তৃণমূল থেকে। এত স্বেচ্ছাচারিতা চালালে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দল করতে পারবেন না। আমরা এভাবে ঘোষণা করা কোনো কমিটিকে অনুমোদন দেব না।