কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: শর্ত পূরণ না হলেও করছাড় সুবিধা দিতে চাপ


, আপডেট করা হয়েছে : 27-07-2023

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: শর্ত পূরণ না হলেও করছাড় সুবিধা দিতে চাপ

চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারলে করছাড়ের সুবিধা পেত দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু তারা এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। তবে করছাড়ের সুবিধা বহাল রাখতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।


এনবিআর সূত্র বলেছে, এই সময় বাড়াতে পিডিবি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও চাপ দিচ্ছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যেতে না পারায় কোম্পানিগুলো করছাড় পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলোর করছাড় সুবিধা বাতিল হলে সরকারকে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। এখন কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় এই সুবিধা দেওয়া হবে, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কারণ, এখন একটি কোম্পানিকে ছাড় দিলে পরে আরেকটি কোম্পানি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।


এই ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ৭ হাজার ১৩৯ মেগাওয়াট। নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে চলমান লোডশেডিং থাকত না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পিডিবির চিঠিতে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলোর ২০২৪ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাস ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন ডলার-সংকটে এলসি খোলায় সমস্যা হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় ডলার দিতে পারছে না। এতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি বিবেচনায় উৎপাদনে যেতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় প্রয়োজন।


নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে না পারা এই ছয়টি কেন্দ্র হলো বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প, পটুয়াখালীতে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেডের (আরএনপিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র, পটুয়াখালীর পায়রায় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট প্রকল্প।


এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে আয়ের ওপর ১৫ বছর করছাড় (বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে) পাবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি ব্যক্তিদের আয়ের ওপর আগমনের তারিখ থেকে তিন বছর করছাড় পাবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের সুদ, রয়্যালটি, বিভিন্ন ফি ও শেয়ার হস্তান্তরে মূলধনি মুনাফার ওপরও করছাড় পাবে কেন্দ্র। তবে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে না পারায় এ সুযোগ শেষ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্পগুলোকে এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।


জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করতে না পারলে তারা ডিফল্টার। করছাড় না দিলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। উৎপাদন ব্যয় বাড়লে জরিমানা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমবে।


জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি কিছু জানেন না। পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ও পিডিবির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) মো. সামছুল হকের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।


এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে বিনিয়োগ আস্তে আস্তে করতে চাইছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে তারা যদি বিনিয়োগে অনীহা জানায় তাহলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার