বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান


, আপডেট করা হয়েছে : 01-08-2023

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ঘটে যাওয়া সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে এবং সহিংসতার অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি বাংলাদেশে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য নিরাপদ পরিবেশে তৈরির আহ্বান জানিয়েছে তাঁরা। 


গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এই আহ্বান জানান। 


গত শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অন্তত পাঁচটি জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এদিন ‘সতর্ক পাহারার’ নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় সংঘর্ষে জড়ান। সংঘর্ষে বিভিন্ন পক্ষের অনেকে আহত হন। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। 


বিষয়টি উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সাবেক সদস্য ও জাস্টনিউজবিডির সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন লাখো মানুষ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বিক্ষোভকারী ও বিরোধী নেতাদের ওপর পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা নৃশংস হামলা চালিয়েছেন। 


হামলায় শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ শত শত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যত কঠোর অবস্থান ও পুলিশি নিষ্ঠুরতার প্রেক্ষাপটে এই ক্রমাগত সংঘাতময় পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিশ্চিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কী পদক্ষেপ নেবে? 


জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে রাজনৈতিক প্রতিবাদকে ঘিরে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে এবং সহিংসতার অপরাধীদের জবাবদিহি করতে আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশের জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানাই এবং আমরা সব পক্ষকে মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সম্মান করার এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।’ 


ম্যাথিউ মিলার আরও বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার প্রতিশ্রুতির ওপর বিশেষ করে ভোটার, রাজনৈতিক দল, দলগুলো যুব শাখা এবং পুলিশসহ অন্য সবার ওপর। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনো রাজনৈতিক সহিংসতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে না।’ 


ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর অপর এক প্রশ্নে জানতে চান, ‘সবাই জানেন যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল গত সপ্তাহে দেশটির রাজধানীতে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা শুধু বেসরকারি সম্পত্তি নয়, পুলিশের সম্পত্তির ওপরও হামলা করছে। সেখানে তারা সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা রাজধানীতে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তারা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এসব করছে, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?’ 


জবাবে মিলার জানান, আগের প্রশ্নের উত্তরে তিনি যে কথা বলেছেন, এ ক্ষেত্রেও তাঁর মন্তব্য একই। 


দস্তগীর জাহাঙ্গীর মিলারের কাছে আবারও প্রশ্ন করেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে একটি পর্যবেক্ষণ চাই। গত ১৫ জুন একটি বিচার বিভাগীয় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানিকালে কানাডার ফেডারেল বিচারক বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন। কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য বিএনপির এক কর্মীর আবেদন নাকচের বিরুদ্ধে এই বিচার বিভাগীয় রিভিউটি করা হয়েছিল। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিল তারা। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?’ 


জবাবে মিলার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো পর্যবেক্ষণ নেই।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার