তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে। আসছে নভেম্বর মাসেই ঘোষণা করা হবে নতুন মজুরি কাঠামো। মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এসব কথা জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে শ্রমিক প্রতিনিধি বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় মজুরি নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। আর মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বলেছেন শিল্পের সক্ষমতাও দেখতে হবে।
দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে সুইং অপারেটর থেকে শুরু করে কাটার মাস্টারসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেন শ্রমিকরা। বর্তমানে সবচেয়ে নবীন কর্মীর ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এই মজুরি বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৯ এপ্রিল মালিক, শ্রমিক আর সরকার পক্ষের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারা দ্বিতীয় দিনের মতো ১০ আগস্ট বসেছিল নতুন মজুরি নির্ধারণের আলোচনায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব না দিলেও নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে উভয় পক্ষই।
বৈঠকে পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অনেক বিষয় রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হবে।
মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক কারখানাও টিকিয়ে রাখতে হবে। শ্রমিকদেরও খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে হবে। আবার দেশটাকেও রক্ষা করতে হবে। এই তিনটি বিষয় মিলিয়ে পোশাক শ্রমিকদের একটা ভালো মজুরি দিতে পারব বলে আশা করছি। এটা শ্রমিকদের পাওয়া উচিত। পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোতে প্রথম গ্রেডের শ্রমিকরা মোট মজুরি পান ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা। মূল বেতন এর অর্ধেকের মতো। সেই মূল নির্ধারণ হয় শ্রমিকদের পরিবহন, আবাসন ও চিকিৎসা ভাতা। যে গ্রেডে মূল মজুরি যত কম, তাদের মোট বেতনও তত কম। যদিও প্রতি বছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বাড়ানোর বিধান আছে বিদ্যমান কাঠামোতে। মজুরি বোর্ড বলছে, এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) আমাদের আরেকটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ পে-স্কেলের প্রস্তাব দাখিল করবে। তার আগেই আমরা ছোট, মাঝারি এবং বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করব। বাস্তব অভিজ্ঞতা নেব এবং উভয় পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের ইচ্ছা আছে, নভেম্বরের মধ্যেই আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাব। আনুষ্ঠানিক এই আলোচনার বাইরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথেও নেমেছিল শ্রমিকরা। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসব কর্মসূচি থেকেও বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে। সেখানে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা দাবি করেছেন। এর আগে পোশাক খাতে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়। তখন নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার টাকা। আর মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বোর্ড। তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথমবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। সেই বোর্ড ৯৩০ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের মজুরি বোর্ড ৫ হাজার ৩০০ টাকা নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে