করোনা ভাইরাস বা অন্য কারণে শহর থেকে কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে যাওয়াদের জন্য গঠিত ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির ঋণ বিতরণ হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার এ পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করে। মোট তহবিলের যা ৪৩ শতাংশ। দেশের ১৪ হাজার ৮২০ জন ব্যক্তি কম সুদের এ ঋণ পেয়েছেন। এক জন গড়ে ঋণ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৩০ টাকা। অবশ্য করোনার মধ্যে কাজ হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঘরে ফিরেছেন বলে বিভিন্ন তথ্যে উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নিয়মে কোনো ব্যাংক আমানত ও ঋণের মধ্যে গড় সুদহারে সর্বোচ্চ ব্যবধান রাখতে পারে ৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ৬ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদে মেয়াদি আমানত নেয়। আর সুদহারের নতুন নিয়মে এখন কৃষিঋণ নিতে সুদ দিতে হচ্ছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। অথচ ঘরে ফেরা কর্মসূচি থেকে ব্যাংকগুলো মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে বিতরণ করে। এতে ব্যাংকের মার্জিন থাকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির ফলে পুনঃ অর্থায়ন নিয়ে নয়ছয় করার সুযোগ কম। আবার গ্রাহক থেকে আদায় হোক না হোক, মেয়াদ শেষ হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদসহ অর্থ কেটে নেয়। যে কারণে ব্যাংকগুলো পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির ঋণে আগ্রহ কম দেখায়। তারা এ ধরনের তহবিল বিষয়ে গ্রাহকদের খুব একটা জানায় না। অনেক সময় গ্রাহক জেনে শাখায় গেলে নানাভাবে তাদের নিরুত্সাহিত করা হয়।
ঘরে ফেরার জন্য পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি থেকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারেন। তিনি কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন, তার ওপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন লাগে। এ তহবিল থেকে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। আর ২ লাখ টাকার বেশি ঋণে ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ গ্রাহক সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য ঋণ নিতে পারেন। এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করা ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ দিতে হবে নারীদের।
নীতিমালার আওতায় এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হওয়ার কথা। তবে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকও এখান থেকে ঋণ দিতে পারবে। এখন পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। করোনা মহামারি বা অন্য কোনো কারণে যারা শহর এলাকার কর্মজীবী, শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা আয় উৎসারী কাজে ছিলেন এবং গ্রামে ফিরেছেন, তাদের জন্য এ তহবিল গঠন করা হয়। এখান থেকে তহবিল নিয়ে ব্যাংকগুলো ঘরে ফেরাদের কৃষি চাষ, মৎস্য বা প্রাণিসম্পদ, তথ্য-প্রযুক্তি সেবা, মৌমাছি পালন, সেলাই মেশিন, কৃত্রিম গহনাসহ আয় উৎসারী কাজে ঋণ দিতে পারে। মূল বিষয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করে এ রকম খাতে ঋণ দেওয়া যায়।