সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বদলে গেছে পঞ্চগড়ের বিলুপ্ত ৩৬ ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা। বাসিন্দাদের ভাষায় উন্নয়ন যেন ‘জাদু’। এই জাদুর ছোঁয়ায় উন্নত হয়েছে জীবনমান। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, পাকা সড়ক, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, মাদ্রাসা এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পেয়েছে আধাপাকা ঘর। ভারতের সঙ্গে সরকারের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ৬৮ বছরের বঞ্চনা শেষে বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হয়েছেন বাসিন্দারা।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বিলুপ্ত ছিটমহলে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। দেশের ভূখণ্ডে যোগ হয় ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর ভূমি। অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি মেলে বাসিন্দাদের।
পঞ্চগড়ের ভূখণ্ডেও যোগ হয় ১১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৭৮ একর এলাকা। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার ৩৬টি ছিটমহল বিনিময় হয়। গত আট বছরে এখানের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এখন চোখে পড়ার মতো।
পঞ্চগড়ের কয়েকটি ছিটমহল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রার চিত্র। জেলা সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহল এখন ‘রাজমহল’ নামে পরিচিত। গারাতি ছিটমহলের বিভিন্ন গ্রামের ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো।
এখানে স্থাপিত হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির ও কমিউনিটি ক্লিনিক। এক সময় যারা দেশহীন ছিলেন, ছিল না কোনো পরিচয়, এখন তাদের ছেলেমেয়েরা বাড়ির পাশেই সরকারি স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিলুপ্ত ৩৬ ছিটমহলে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসা করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০২ কিলোমিটার পাকা সড়ক, প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১১টি মসজিদ এবং চারটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। আট হাজার গ্রাহক পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগ। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে নির্মিত হয়েছে ৩৪৯টি আধাপাকা ঘর।
বিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের ফয়জুল হক, আজিজুল ইসলামসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘এলাকার উন্নয়ন জাদুর মতো বলা যায়। আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি এলাকার ছোটবড় সব রাস্তা পাকা হবে, সরকারি স্কুল-কলেজ হবে। ছিটমহলের বাইরে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের পড়তে হতো মিথ্যা পরিচয় দিয়ে। ছিটমহলের অধিবাসী প্রকাশ পেলেই ভর্তি নেওয়া হতো না। এখন সবাই স্মার্ট কার্ড পেয়েছি। দেশের গর্বিত নাগরিক।’
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মিথ্যা পরিচয়ে লেখাপড়া করেছেন। তাঁর জন্মনিবন্ধন ছিল না। এখন সব পেয়েছেন। স্মার্ট কার্ড দিয়ে মোবাইলের সিম তুলতে পারেন।
গারাতি ছিটমহল এলাকার বাবুল খান বলেন, দুগ্ধ খামার করে বেশকিছু যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটা আগে কল্পনাও করা যেত না। সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। এলাকায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নকাজ করায় ২০১৫ সালের পর থেকে বদলে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা।