ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই ত্রিপক্ষীয় এ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তি হয়ে গেলে সেপ্টেম্বর মাসেই নেপাল থেকে সরবরাহ করা ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ২৫ বছর। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা হতে পারে।
ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহার এবং সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতি ইউনিটি বিদ্যুতের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ থেকে ৬৫ পয়সা দিতে হবে। এ বিষয়গুলে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শিগগিরই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হবে। মূলত ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে এ বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে ইতিমধ্যেই নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ট্রানজিট করে বাংলাদেশে ঢুকবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনাও করছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা। এ ছাড়া এই বিষয়ে শিগগিরই তিনটি দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এনইএ-এর মুখপাত্র সুরেশ ভট্টরাই জানিয়েছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করার জন্য তিনটি দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই মৌখিক বোঝাপড়া সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
এনইএ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রবাল অধিকারী বলেছেন, নেপাল এবং বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পাওয়ার পারচেজ ডকুমেন্টে সম্মত হয়েছে। কিন্তু উভয় দেশের মধ্যে শুল্ক এবং বাণিজ্য মার্জিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যদিও এ তিনটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনও স্বাক্ষর হয়নি, তারপরও পিপিএ এবং অন্য শর্তাবলির বিষয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।
নেপালের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত না থাকায় দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে হবে। ভারতের বহরমপুর হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে দেশে ওই বিদ্যুৎ আনতে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে। ইতিমধ্যে সঞ্চালন লাইন বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র মতে, চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কারিগরি ও অন্যান্য বিষয় ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হলেও বিদ্যুতের দাম কত হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। নেপাল তাদের ওয়েট সিজনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, সে সময় বাংলাদেশেরও চাহিদা থাকে। কারণ ড্রাই সিজনে নেপালের নিজেরই বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। আর বাংলাদেশে শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে তাই এ চুক্তিতে দুপক্ষই লাভবান হবে।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন সময়ের আলোকে জানান, যতদ্রুত সম্ভব চুক্তি করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভারতও রাজি আছে। আশা করছি, চলতি মাসেই তা সম্ভব হবে। হলে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ আসবে।
তিনি বলেন, এটা অনেকটা স্পট মার্কেটের মতো সকালে অর্ডার করলে বিকালে নেপাল তা সরবরাহ করবে।
বর্তমানে নেপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০০ মেগাওয়াট। দেশটির নির্মাণাধীন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী বছরগুলোতে প্রতি বছর ১০০০ থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ যোগ হবে নিজেদের জাতীয় গ্রিডে। অন্যদিকে নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারও প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট করে বাড়বে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ রফতানির চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এটি হলে বাংলাদেশে রফতানির মতো উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেপালের থাকবে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতির (সভারেন গ্যারান্টি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়া নেপালে বাস্তবায়নাধীন ভারতের জিএমআর গ্রুপের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে শিগগির একটি চুক্তি সই হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও ভবিষ্যতে শীত মৌসুমে যখন দেশে চাহিদা কমে যায় তখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেপালে রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সূত্র মতে নেপাল এবং বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে নেপালে ৬৮৩ মেগাওয়াট সানকোশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। ওই কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে।
নেপালে আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৯ সালে জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত বছরের ২৫ অক্টোবর নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেছেন, নেপাল এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে তাদের বিদ্যুৎ খাতে একটি মেগা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
ৃ