৪০ বছরের জয়যাত্রার পর মুখ থুবড়ে পড়েছে চীনের অর্থনৈতিক মডেল


, আপডেট করা হয়েছে : 22-08-2023

৪০ বছরের জয়যাত্রার পর মুখ থুবড়ে পড়েছে চীনের অর্থনৈতিক মডেল

টানা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন। প্রবৃদ্ধি এতটাই দারুণ ছিল যে, দেশটি বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। কিন্তু কোভিড মহামারি এবং অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের কারণে চীনের অর্থনীতি বর্তমানে চরম দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চার দশক ধরে যে মডেল অনুসরণ করে চীন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে তা ‘ভেঙে পড়েছে’। একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া এ তথ্য জানিয়েছে। 


মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের অর্থনৈতিক সংকট দেশটির সামগ্রিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। অর্থনীতিবিদদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, চীনের সংকট এতটাই গভীর যে—দেশটির অর্থনীতি বর্তমানে অনেক ধীর গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক পার্থক্য আরও বাড়বে। পাশাপাশি দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

 

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই অর্থনৈতিক দুর্বলতা কেবল অল্প কয়েকটি বছর নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি হতে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘বর্তমানে দেশটির (অর্থনৈতিক) মডেল ভেঙে পড়েছে।’ এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং অর্থনৈতিক সংকট বিষয়ক ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম তোজি ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘আমরা অর্থনীতির ইতিহাসে অন্যতম নাটকীয় গতিপথে একটি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।’ 

 

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানিয়েছ, চীনের সরকারি-বেসরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে দেশটির ২০২২ সালের মোট জিডিপির ৩০০ শতাংশ বেশি। এর আগে, সবচেয়ে বেশি জাতীয় ঋণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ২০১২ সালে দেশটির মোট ঋণ ছিল জিডিপির ২০০ শতাংশ বেশি। সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই বলছেন—বিগত কয়েক দশক ধরে যে মডেল অনুসরণ করে প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল তা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেছে। 


এর আগে, গত বছর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করতে গিয়ে বেশ বেশি ঋণ নেওয়ার পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। সি বলেন, ‘কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে, উন্নয়ন মানে হলো—বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা এবং বিনিয়োগের অর্থ বাড়িয়ে তোলা।’ কিন্তু এরপরও সি কিং তাঁর প্রশাসন দেশের অর্থনীতিকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে খুব সামান্য পদক্ষেপই নিয়েছেন। 

 

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) গত জুনে জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। এনবিএস-এর তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চীনের জিডিপি ছিল ৫৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান অর্থাৎ ৮ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে এনবিএস বলছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। 


এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় চীন সোমবার চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো লোন প্রাইম রেট (এলপিআর) ১০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ করেছে অথচ বিগত পাঁচ বছরে দেশটি একবারও এলপিআর হার পরিবর্তন করেনি।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার