মেয়াদ বৃদ্ধির ফাঁদে উন্নয়ন প্রকল্প


, আপডেট করা হয়েছে : 30-08-2023

মেয়াদ বৃদ্ধির ফাঁদে উন্নয়ন প্রকল্প

সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক বছর মেয়াদি প্রকল্প নেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এক বছরের সেই প্রকল্প চলছে সাত বছর ধরে। এই সময়ে মেয়াদ বেড়েছে চারবার, কিন্তু কাজ হয়নি। পঞ্চমবার মেয়াদ বাড়ানো হয় গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়।


একই অবস্থা আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পেরও। ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ চলছে ৮ বছর ধরে। চারবার সময় বাড়িয়েও কাজ না হওয়ায় পঞ্চম দফা আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে ভারতের অংশের কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। কাজ না হওয়ায় রেললাইনটি চালুর প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না।  


শুধু এই দুটি নয়, আরও অনেক প্রকল্পে এভাবে এক-দুই বছরের জায়গায় সাত থেকে আট বছর; কখনো এক দশক বা যুগও পার হয়ে যায়। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পের বারবার সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।


গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় মোট ২৫টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল শুধুই মেয়াদ বৃদ্ধির। এই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ অন্তত চার থেকে পাঁচবার বাড়ানো হয়েছে।  


গতকাল একনেক সভার কার্যতালিকায় দেখা যায়, বিভিন্ন খাতের ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে ১৩টি নতুন প্রকল্প। ৭টি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ-পঞ্চম দফায় মেয়াদ বেড়েছে পাঁচটি প্রকল্পের। এ তালিকার বিভিন্ন প্রকল্পের মূল ব্যয়ের চেয়ে বিভিন্ন দফায় ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি।


সংশোধিত প্রকল্পের মধ্যে ‘স্মলহোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি)’ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ২ বার, ব্যয় বেড়েছে ৮১৭ কোটি টাকা। ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা। 


‘যশোর, কক্সবাজার, পাবনায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও আনুষঙ্গিক ভবন নির্মাণ এবং নোয়াখালীতে আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ও জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ’ প্রকল্পের মেয়াদ ১ বার বেড়েছে, ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। প্রকল্পের দেরির কারণে ভারত ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণ বাতিল করেছে। ‘শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২): দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ২ বার, ব্যয় বেড়েছে ১৯৪ কোটি টাকা। ‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৮৩৮ কোটি টাকা; তা ৩৮৭ কোটি টাকা বেড়ে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা হয়েছে। একবারেই মেয়াদ বেড়েছে চার বছর। ‘রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ’ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৬৮ কোটি টাকা, মেয়াদ বেড়েছে ২ বছর। ‘সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট ১০% সিম্পল সাইকেল (এইচএসডি-ভিত্তিক) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ৩ বার, ব্যয় বেড়েছে ২৪৮ কোটি টাকা। 


সিরাজগঞ্জে ‘উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ’ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ৯২ কোটি টাকা ২৬৬ মিটার দীর্ঘ এই ওভারপাসের কাজে মেয়াদ বেড়েছে পাঁচবার। এক দফা ব্যয়ও বেড়েছে। ‘যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক (আর-১১০) ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে মেয়াদ বেড়েছে চারবার; ব্যয়ও বেড়েছে একবার। ‘নওগাঁ সড়ক বিভাগের ১টি আঞ্চলিক ও ২টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে পাঁচবার। 


এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত সাতটি প্রকল্প সভাকে অবহিত করার জন্য তোলা হয়। এ তালিকায় থাকা ‘আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ প্রকল্পও শুরু হয় ২০১৬ সালে। এর মেয়াদ বেড়েছে ৪ বার এবং ব্যয় বেড়েছে ৯৯৭ কোটি টাকা। ‘পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে চারবার। ২০১৭ সালে থেকে কাজ চলছেই।


মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর একই চিত্র ছিল গত কয়েকটি একনেক সভায়ও। জুন ও জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ১২টি প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এসব প্রকল্পে মূল ব্যয়ের চেয়ে বাড়তি খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার