আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধন ৯ সেপ্টেম্বর


, আপডেট করা হয়েছে : 30-08-2023

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের উদ্বোধন ৯ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশ ও ভারতের বহুল কাঙ্ক্ষিত আখাউড়া–আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্য উদ্বোধনের দিনকে সামনে রেখে এই রেলপথের এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। ওই দিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী রেলপথটির উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনের পর প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ঢাকা কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) থেকে সরাসারি পণ্য নিয়ে (কন্টেনারবাহী ট্রেন) আগরতলা হয়ে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল সেভেন সিস্টারে যাবে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে আরো পরে।


সম্ভাব্য তারিখে উদ্বোধনের বিষয়টিকে সামনে রেখে আখাউড়া–আগরতলা রেলরুটে ট্র্যাক কার চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। এই রেলপথের বাংলাদেশ অংশের পুরোটাতে সফলভাবে চালানো হয়েছে ট্র্যাক কার।


গত ২২ আগস্ট আখাউড়–আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞাসহ দুদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গ্যাংকারযোগে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। দুপুর পৌনে ১টার দিকে এটি আখাউড়ার শিবনগর এলাকায় ত্রিপুরা সীমান্তের জিরো লাইনে পৌঁছায়। এ রেলপথ স্থাপনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এতে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যবাসীও খুব উচ্ছ্বসিত। আর এর মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য জোরালো হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।


এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) প্রধান প্রকৌশলী ও আখাউড়া–আগরতলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আবু জাফর মিঞা আজাদীকে বলেন, আখাউড়া–আগরতলা রেললাইনের কাজ শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। ফিটিংস লাগানো শেষ হয়েছে। এখন বেলাস্টিং চলছে, পেকিং দেওয়া হচ্ছে যাতে লেভেল ঠিক থাকে। এখন ট্রায়াল হবে। ইমিগ্রেশন ভবনের কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো আগামী ৯ তারিখের আগে শেষ হবে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, প্রথমে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন যাবে ভারতের সেভেন সিস্টারে। এরপর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও শুরু হবে।


রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আখাউড়া থেকে ভারতের ত্রিপুরার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত রেলরুটটি সাড়ে দশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। এখানে সাড়ে ছয় কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশে। বাকি চার কিলোমিটার আগরতলা অংশে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও রেলযোগাযোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে এ রেলপথটি। আখাউড়া থেকে আগরতলা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে রেল যোগাযোগও স্থাপন হবে এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


জানা গেছে, ভারত–বাংলাদেশ রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পটি আখাউড়া–ঢাকা হয়ে আগরতলা এবং কলকাতার মধ্যে ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দেবে। প্রকল্পটি চালু হলে ৩১ ঘণ্টার পরিবর্তে সময় লাগবে ১০ ঘণ্টা এবং আগরতলা–কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার থেকে দূরত্ব কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫১৩ কিলোমিটার।


স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে রেলপথে বাণিজ্যের দ্বার খুলবে, কমবে পরিবহণ খরচ–এমনটাই দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আখাউড়া থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেঙমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই প্রকল্পের কাজ শুরু করে। দুই দেশের এ রেলপথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার।


এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ কোটি টাকা।


২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার