অক্টোবর মাসের মধ্যেই রেলের চারটি বড় প্রকল্প উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে। এর মধ্যে দুইটি প্রকল্পের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। বাকি দুটি প্রধানমন্ত্রীর সময়ের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এই রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার সপ্তাহখানেক পর থেকে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ধরা হবে। তবে শুরুতে তিনটি স্টেশন (মাওয়া, জাজিরা ও শিবচর) ট্রেন থামতে পারে। শুরুতে পদ্মা সেতুতে প্রতিদিন একটি ট্রেন চলতে পারে। ভাঙা-রাজশাহী রুটের ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত আনা হতে পারে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)।
২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে বলেও আশা করা হচ্ছে। গত মাস পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২২ মে সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
এদিকে নির্বাচনের আগেই সরকার আটটি মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করা হবে। এর বাইরে রেলের চারটি প্রকল্প রয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন, খুলনা-মোংলা রেলপথ এবং বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা প্রকল্প। এগুলো অক্টোবরের মধ্যেই উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
রেলমন্ত্রী আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এই মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাবেন। সেই সময়ে দিল্লি থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উদ্বোধন করতে পারেন।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের সময় পাওয়া যোতে পারে।
অন্যদিকে, প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণধানী চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন ১০০ কিলোমিটার রেলপথ অক্টোবরের শেষভাবে উদ্বোধনের জন্য সরকার প্রধানের সময় চাওয়া হয়েছ। সম্প্রতি বন্যায় রেলপথটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর খুলনা-মোংলা রেল লাইন উদ্বোধনের জন্য অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
এই প্রকল্প ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো। আর ট্র্যাক লিংকিং করছে আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।