পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে রামেক হাসপাতাল


, আপডেট করা হয়েছে : 09-09-2023

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে রামেক হাসপাতাল

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসার কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে রাজশাহী বিভাগের আট জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকা থেকে অনেকেই চিকিৎসা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবার প্রাণ কেন্দ্র বলা যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে।


তবে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি জড়তা ও নানা সমস্যা কাটিয়ে এখন পরিচ্ছন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান এটি ঝকঝকা-তকতকা হাসপাতালে রুপ নিয়েছে। এক সময় এই হাসপাতালের বাথরুম ব্যবহার করা যেতোনা। বাইরে পড়ে থাকা আবর্জনার স্তুপে ছড়াতো দুর্গন্ধ। কিন্তু সম্প্রতি এই দৃশ্য চোখে পড়ে না। একই সাথে চিকিৎসা সেবার মানও আগের চেয়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন রোগি ও অভিভাকরা।


জানা গেছে, এক সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাথরুমগুলো এতোটাইি নোংরা ছিল যে রোগিরা ব্যবহার করতে পারতেন না। ওয়াসরুমে গিয়ে ধোয়া যেতো না হাত বা মুখ। বাইরে এলোপাথাড়িভাবে পড়ে থাকতো ময়লা আবর্জনার স্তুপ। সেই ময়লা হাসপাতালের মধ্যে থাকা কুকুরগুলো ছড়িয়ে ছিনিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করতো। বিশেষ করে হাসপাতালের বাইরে দেখলে বোঝা যেতো ওয়ার্ডের ভেতরের অবস্থা। বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর থেকে এই হাসপাতালটির সেই রুপ আর দেখা যাচ্ছে না।


রাজশাহীর দুর্গাপুর থেকে রোগি নিয়ে আশা আল আমিন জানান, তিনি তার নানিকে গত দুদিন আগে রামেক হাসপাতালের ৫০ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। সেখানে চলছে তার চিকিৎসা। তিনি বলেন, বর্তমান হাসপাতালের পরিস্কার পরিছন্নতার বিষয়টি তিনি লক্ষ্য করেছেন। শুধু ওয়ার্ডেই নয়, হাসপাতালের সবখানই এখন পরিস্কার।


তিনি আরো বলেন, এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় হাসপাতালে এতোটাই ময়লা ও দুর্গন্ধ ছিল ওয়ার্ডের ভেতরে টেকা যেতোনা। বাথরুম ব্যবহার করতে গেলে বমি আসতো। মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে হাসপাতাল এতোটা পরিচ্ছন্ন হবে তিনি দেখে রীতিমত অবাক।


পবার পারিলা থেকে রোগি নিয়ে আসা মোজাম্মেলল জানান, মূলত মেডিসিন ওয়ার্ড বা বাইরে এক সময় থাকা যেতো না। খোদ ওয়ার্ডে বা বাইরে রোগি নিয়ে থাকতে অনেক কষ্ট হতো। বর্তমান সেই অবস্থা আর নেই। তিনি বলেন, এখন হাসপাতালের বারান্দাতেও রোগি রেখে চিকিৎসা করার মত পরিবেশ সৃষ্টি রয়েছে। পুঠিয়া থেকে রোগি নিয়ে আসা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর তার বাবাকে ৮নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে টানা দুইমাস থাকতে হয়েছে। এই সময় আমরা রাতে হাসপাতালের ভেতরেই ফাঁকা জায়গায় রাতে ঘুমাতাম।


কিন্তু দুর্গন্ধে আমাদের রাতে ঘুম আসতো না। জেগে জেগেই রাত পার করতে হতো। গত তিনদিন থেকে তিনি স্ত্রীকে গাইনি বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু গাইনি ওয়ার্ডের মত জায়গাতেও কোনো ধরনের দুর্গন্ধ নেই। এখন বাথরুমগুলো অনেকটাই পরিস্কার। নগরীর হেতেমখাঁ এলাকার রোগি জাহানারা জানান, আমাকে মাঝে মধ্যে এ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। গত বছর চারবার তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।


তিনি গত বুধবার উচ্চ রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু আগে হাসপাতালের ওয়ার্ড বা বাইরে যে পরিবেশ ছিল বর্তমান তা নেই। এখন বলাই যায় বর্তমান ঝকঝকা হাসপাতাল। তিনি বলেন, বেড না পেয়ে আমি ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। তারপরও মনে হচ্ছে না ওয়ার্ডের ভেতরে বেডের প্রয়োজন আছে। কারণ ওয়ার্ডের বেডের চেয়ে এখন মেঝেতে বা বাইরের বারান্দায় চিকিৎসা নেয়াই তার কাছে ভাল মনে হচ্ছে। কারণ হিসাবে তিনি বলছেন বাইরের বারান্দায় এখন থাকা যায়, কোনো ধরনের দুর্গন্ধ লাগে না।


হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা, ভেতরের ফাঁকাস্থানে বসা যায়। বাথরুমগুলো এখন ব্যবহার করা যায়। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে কোনো কমতি নেই। বাইরের সবখানেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার একটি ছাপ দৃশ্যমান। সকালের আগেই পুরো হাসপাতাল পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্গন্ধমুক্ত চিকিৎসা নিতে পারছেন রোগিরা। এমন পরিস্কার পরিছন্নতার জন্য রোগি ও অভিভাবকরাও অনেকটাই খুশি।


নাম প্রকাশ না করার সর্তে রামেক হাসপাতালের এক কর্মচারি জানান, এক সময় লোকবল থাকলেও হাসপাতাল পরিস্কার হতো না। কিন্তু এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের পুরোচিত্র বদলে গেছে। নিয়মিত হচ্ছে পরিস্কার। যা আগে হতো না। তিনি বলেন, পরিচালকের নিদের্শনায় ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের ইনচার্জ মোসারফ হোসেন সর্বক্ষনিক কর্মচারিদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।


সেই নিদের্শনা মোতাবেক কর্মচারিরা কাজ করছেন। এর ফলে বর্তমান হাসপাতালটি আগের চেয়ে অনেকটাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। তিনি বলেন, এক সময় কিছু কর্মচারি সকালে এসে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে চলে যেতো। আবার অনেকেই সাক্ষরও করতো না। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। এখন যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন। পরিচালকের কড়া নিদের্শনায় রামেক হাসপাতাল বর্তমান পরিচ্ছন্ন হাসপাতালে রুপ নিয়েছে।


এব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, আমি যোগদানের পর হাসপাতালের পরিস্কারের বিষয়টি আগে অনুভাবন করেছি। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, হাসপাতাল একটি স্পর্শকাতর জায়গা। রোগিরা চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালের দুর্গন্ধে যদি অসুস্থ্য হয়ে যায় তাহলে সেটাকে চিকিৎসা কেন্দ্র বলা যায় না। আমি চেষ্টা করছি রোগিরা যেনো একটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। তারা যেনো সঠিক চিকিৎসা পায়।


তিনি আরো বলেন, আমি প্রতি মাসে ডাক্তার নার্স ও কর্মচারিদের নিয়ে বসে দিক নিদের্শনা দিচ্ছি। কাজের জবাবদিহিতার জায়গা সৃষ্টি করছি। আশা করি আমি দায়িত্ব থাকা অবস্থায় এই হাসপাতাল থেকে কোনো রোগি বিনা চিকিৎসায় ফেরত যাবে না। এমনকি রোগিরা একটি পরিচ্ছন্ন জায়গায় চিকিৎসা পাবে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার