রাজশাহীতে হত্যাচেষ্টা মামলায় বিতর্কিত সেই এএসআই কারাগারে


, আপডেট করা হয়েছে : 10-09-2023

রাজশাহীতে হত্যাচেষ্টা মামলায় বিতর্কিত সেই এএসআই কারাগারে

ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আপন খালার জমি দখল ও হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জামিনে থাকা পুলিশের সেই বিতর্কিত এএসআই আশরাফুল ইসলামসহ দুই জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।


রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিজ্ঞ বিচারক মাহবুব আলম এ আদেশ দেন। এর আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার।


ওই মামলায় অস্থায়ী জামিনে ছিলেন এএসআই আশরাফুল ইসলাম। এর আগে দুর্গাপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হওয়ায় এএসআই আশরাফুলকে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।


দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা গ্রামের ব্যবসায়ী বকুল ইসলাম বাদী হয়ে এএসআই আশরাফুল, আশরাফুলের ছেলে আকাশ ও ভাড়াটে ক্যাডার শরিফুল সহ অজ্ঞাত আরও ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ জুন দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্গাপুর থানার এসআই নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত ৩১ জুলাই আদালত অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দাখিল করেন। এজাহার নামীয় তিন আসামির মধ্যে এক আসামিকে বাদ দিয়ে দুইজনের নামে আদালতে চার্জসিট দেন পুলিশ। রোববার ছিলো মামলার ধার্য তারিখ। এদিন বিজ্ঞ আদালত অভিযোগপত্র (চার্জসিট) গ্রহণ করেন এবং অস্থায়ী জামিনে থাকা এএসআই আশরাফুল ও তার সহযোগী শরিফুল ইসলামের জামিন বাতিল করে PW মূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।


মামলার এজাহার ও আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুন বিকেলে দুর্গাপুর পৌর সদরের পূর্ব সিংগা গ্রামের মৃত আবু হানিফের স্ত্রী রাবেয়া বেগমের জমি দখল করতে যান এএসআই আশরাফুল সহ তার ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনী। রাবেয়া বেগম সম্পর্কে এএসআই আশরাফুলের আপন খালা হন। সিংগা মৌজার সামান্য কিছু জমি নিয়ে খালা রাবেয়া বেগম ও খালাতো ভাই বকুল ইসলামের সাথে দীর্ঘ দিন থেকে বিবাদে জড়িয়েছেন এএসআই আশরাফুল। ঘটনার দিন এএসআই আশরাফুল সহ তার ভাড়াটে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে জমি দখল করতে যান।


এ সময় বকুল ইসলামের ভাইরা ভাই জুয়েল রানা ওই পথ দিয়ে যাওয়ার পথে এএসআই আশরাফুলকে জমি দখল কাজে বাধা দেন এবং বিষয়টি বকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এএসআই আশরাফুল সহ তার ভাড়াটে ক্যাডাররা জুয়েল রানাকে হাসুয়া দিয়ে কোপ দেয় এবং হাতুড়ি, জিআই পাইপ ও ড্রেগার দিয়ে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন চালায়।


একই সময় রাবেয়া বেগম ঘটনাস্থলে উপস্থিতি হলে হাসুয়া দিয়ে রাবেয়া বেগমের মাথায় কোপ দেয় এএসআই আশরাফুল। এছাড়া লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙে দেয়। এ খবর শুনে বকুল ইসলাম স্ত্রী শিমু খাতুনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারার জন্য ধাওয়া করে এএসআই আশরাফুল। মাঝখানে স্ত্রী শিমু খাতুন বাধাদিলে তার দুই পায়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ফোলা জখম করা হয়।


ঘটনার পর স্থানীয়রা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় জুয়েল রানা, রাবেয়া বেগম ও শিমু খাতুনকে উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত ৩ জনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ২ জনকে ওইদিন সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


এদিকে, অভিযুক্ত এএসআই আশরাফুল ইসলাম বর্তমানে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রে সংযুক্ত আছেন। কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে নিজ এলাকা রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা গ্রামে অবৈধভাবে আপন খালার জমি দখলে নিতে গিয়েছিলেন তিনি।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই নজরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত শেষে গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞ আদালতে চার্জসিট দাখিল করা হয়েছে।


বাদীর আইনজীবী এডভোকেট শাহাদাত হোসেন বাচ্চু জানান, রোববার ছিল মামলার ধার্য তারিখ। এদিন বিজ্ঞ আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে অস্থায়ী জামিনে থাকা আসামিদের জামিন বাতিল করে পিডাব্লিউ মুলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার