দেশে দেশে মূল্যবৃদ্ধিতে বিক্ষোভ


, আপডেট করা হয়েছে : 11-06-2022

দেশে দেশে মূল্যবৃদ্ধিতে বিক্ষোভ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তীব্র খরার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের দাম এক লাফে আকাশে উঠে গেছে।যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় গমের দাম ৫২ শতাংশ বেড়েছে। পাম অয়েলে ২৫ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের এ লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতিতে শিগগিরই দুর্ভিক্ষ নামে বিশ্বে।

না খেয়ে মারা যেতে পারে কোটি কোটি মানুষ। জাতিসংঘের বিশ্বখাদ্য সংস্থা গত সপ্তাহেও নতুন করে সেই সতর্কতা দিয়েছে। চলমান খাদ্য সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যেই অস্থিরতা শুরু হয়েছে বিশ্বে।

বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে দেশে দেশে। বৃহস্পতিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই চিত্র তুলে ধরেছে রয়টার্স।

শ্রীলংকা : স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলংকা। জ্বালানি তেলের জন্য দেশটির বাসিন্দাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেট্রল স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হয়।

রিজার্ভ সংকটের কারণে কাগজ আমদানি করতে না পারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় সরকার।

রকারবিরোধী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। অর্থনৈতিক সংকটের জেরে সৃষ্ট সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।

সুদান : মার্চ মাসে সুদানের মাদানি শহরে একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিছিল করেছিল। ওই অভ্যুত্থানের কারণে চরম অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে হয় সুদানকে। গত বছরের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সুদানের মুদ্রার মান এক-তৃতীয়াংশ কমেছে, যা জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের দাম দ্রুত বাড়িয়ে দিয়েছে।

গ্রিস : হাজার হাজার গ্রিক শ্রমিক এথেন্সে মে দিবসের সমাবেশে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। গ্রিসের বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি মার্চ মাসে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।

আর্জেন্টিনা : প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে ২৩ এপ্রিল বুয়েনস আয়ার্সে হাজার হাজার কৃষক প্রতিবাদ করেছিলেন। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি রোধে এবং খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্টের গৃহীত নীতিগুলো কৃষি খাতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

ইরান : মে মাসের প্রথম দিকে সরকারের ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে ইরানে বিভিন্ন ধরনের ময়দাভিত্তিক খাদ্যদ্রব্যের দাম ৩০০ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সময় সরকার কিছু মৌলিক পণ্য, যেমন-রান্নার তেল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বাড়ায়।

দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ চলাকালে কর্তৃপক্ষের কাছে আরও চ্যালেঞ্জ হিসাবে দাঁড়ায় পেনশনভোগীদের বিক্ষোভ। তারা ৬ জুন ইরানে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।

চিলি ও সাইপ্রাস : ২৫ মার্চ চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর খাদ্য উপবৃত্তির দাবিতে মিছিল করেছে। সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় বিক্সোভ হয় ১৮ মে।

উচ্চমূল্য এবং উৎপাদন সমস্যার প্রতিবাদে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে এদিন কয়েক টন দুধ ঢেলে দিয়েছিলেন কৃষকরা। এ সময় খড়ও পুড়িয়েছেন তারা।

গিনি : গত বছর সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এরই মধ্যে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় গিনির রাজধানীতে ২ জুন একজন নিহত হন।

পেট্রলের দাম ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে লোকেরা রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় কোনাক্রি শহরে রাতারাতি বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।

ইন্দোনেশিয়া : পাম অয়েল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার কৃষকরা ১৭ মে জাকার্তায় বিক্ষোভ করেছে। ক্ষুদ্র কৃষকদের একটি গ্রুপ জানায়, নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ২৫ শতাংশ পাম অয়েল মিল ক্ষুদ্র কৃষকদের কাছ থেকে পাম ফল কেনা বন্ধ করে দেয়।

আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভিত্তি মূল্যের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম দামে মিল মালিকরা পাম ফল কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার