প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তোলা সেলফি গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এত দেউলিয়া, এত নিঃস্ব হয়ে গেছে যে-বাইরের একজনের সঙ্গে একটা সেলফি তুলে ঢোল পেটাচ্ছে, জিতে গেছি। জেতাবে তো বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে। সেই ভোট ঠিকমতো হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কোনো বাইডেনই আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না। সেলফি রক্ষা করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এ জাতির দুর্ভাগ্য, বেসিক (মৌলিক) জায়গায় আমরা কেউ যাই না; আমরা সেলফির মতো ইস্যুতে যাই!’ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ স্মরণসভার আয়োজন করে ‘এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ’। এদিকে বিকালে গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপিতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ২৪ জন সাবেক কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন।
স্মরণসভায় সেলফি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নাকি বলেছেন-ফখরুল সাহেব এখন কী বলবেন।’ আমি বলি-আমার পরামর্শটা নেবেন। এ ছবিটা (জো বাইডেনের তোলা সেলফি) বাঁধিয়ে গলায় দিয়ে ঘুরে বেড়ান। ওটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে। এটা দিয়ে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেন-বাইডেন এখন আমার সঙ্গে আছে। মির্জা ফখরুল বলেন, অথচ আপনার প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বললেন-‘আমেরিকা বলছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নাকি তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিচ্ছে না, সেজন্য আমেরিকা নাকি তাকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তাহলে এখন কি আমরা বুঝব, আপনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপটা দিয়ে দিয়েছেন?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে উনি (প্রধানমন্ত্রী) আবার আরেকটা কথা বলেছেন-এ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকা ঘাঁটি করতে চায় এবং গোটা এলাকায় সে-ই প্রভুত্ব করবে, দেশগুলো দখল করবে, আক্রমণ করবে-এভাবে কথা বলেছেন।’ সেলফি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, এতে করে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়নি। ভিসানীতির পরিবর্তন হয়নি। নতুন ডেমোক্রেসি কনভেনশন ডেকে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। সুতরাং ভেবেচিন্তে কথা বলবেন। তিনি বলেন, বাইডেন বা আমেরিকা-তারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। খুব পরিষ্কার করে তারা বলেছেন-আমরা বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। তারা বলেছেন, আমরা এখানে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চাই। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এটা শুধু আমেরিকা নয়, সব গণতান্ত্রিক দেশ তা-ই বলছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে-এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা বলেছেন-সংসদ বিলুপ্ত করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন করুন। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিন। সাইফুর রহমানের ছেলে নাসির রহমানের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগরের সভাপতি এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপিতে যোগ দিলেন ২৪ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ২৪ জন সাবেক কর্মকর্তা। রোববার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তারা যোগ দেন। এ সময় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যোগ দেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৮ জন ও নৌবাহিনীর দুজন এবং বিমানবাহিনীর চারজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ দাবি : স্বাস্থ্য খাতে সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মেয়র পরিবারের প্রমোদ ভ্রমণই প্রমাণিত হয়-এ রোগ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতা। অনির্বাচিত গণবিরোধী সরকার বলেই তারা জনস্বাস্থ্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। আবার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে। মৃতদের একটা বড় অংশ শিশু। ৭ দিনের ব্যবধানে দুই সন্তান হারিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবর কি-এ ব্যর্থ সরকারের বিবেককে নাড়া দেয় না? তাদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, জবাবদিহি নেই। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের নামে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. আবদুস সালাম প্রমুখ।