রাশিয়ায় প্রস্তুত রূপপুরের জ্বালানি, আসছে অক্টোবরে


, আপডেট করা হয়েছে : 11-09-2023

রাশিয়ায় প্রস্তুত রূপপুরের জ্বালানি, আসছে অক্টোবরে

নির্মাণের চূড়ান্ত ধাপে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রথম ইউনিটের চুল্লিতে ইউরেনিয়াম জ্বালানি স্থাপন করা হবে শিগগিরই। রাশিয়া থেকে অক্টোবরের শুরুর দিকে জ্বালানি বাংলাদেশে আসার কথা। এই জ্বালানি প্রস্তুত হয়েছে রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেন্ট্রেটস প্লান্টে (এনসিসিপি)। প্রথম কার্গোতে ১৬৮টি ফুয়েল অ্যাসেমব্লি আসবে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম-২৩৮ ও ইউরেনিয়াম-২৩৫ এ দুই আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। খনিতে প্রাপ্ত আকরিকে (ইয়েলো কেক) প্রথমটির পরিমাণ ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অন্যটির মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ। চুল্লিতে ফিউশন বিক্রিয়ায় অংশ নেয় মূলত ইউরেনিয়াম-২৩৫। জ্বালানিতে এর পরিমাণ ৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকতে হয়। এ জন্য কারখানায় নানা প্রক্রিয়ায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।

যেভাবে তৈরি হচ্ছে রূপপুরের জ্বালানি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এনসিসিপি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পারমাণবিক জ্বালানি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এই জ্বালানি রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের অধীন টেভেল কোম্পানির আওতায় রয়েছে এসসিসিপি। টেভেল রাশিয়াসহ ১৫টি দেশের ৭০টি পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরে, আটটি দেশের গবেষণা রিঅ্যাক্টরে জ্বালানি সরবরাহ করে। সম্প্রতি এসসিসিপি ঘুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তৈরির নানা ধাপ সম্পর্কে জানা যায়। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছয় সাংবাদিককে কারখানাটি ঘুরে দেখান এনসিসিপির ওয়ার্কশপ ম্যানেজার ভ্লাদিস্লাভ শাবালিন। জ্বালানি উৎপাদন পরিবহন ও এর নিরাপত্তার নানা বিষয় সম্পর্কে অভিহিত করেন এসসিসিপির মহাপরিচালক আলেক্সি ঝিগানিন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের উপপরিচালক আলেক্সান্দার নিকিফরভ।

কারখানা ঘুরে দেখা যায়, ইউরেনিয়াম ডাইঅক্সাইডকে নানা ধাপে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে ছোট ছোট প্যালেট তৈরি করা হয়। প্যালেটগুলো প্রায় ৪ মিটার লম্বা ফুয়েল রডের মধ্যে রাখা হয়। রূপপুরের জন্য তৈরি একটি রডে ৩১২ থেকে ৩১৩টি প্যালেট থাকে। ৩২০টি রড নিয়ে একটি ফুয়েল অ্যাসেমব্লি হয়। রূপপুরে একটি চুল্লিতে এমন ১৬৩ অ্যাসেমব্লি বসানো হবে। ইউরেনিয়াম জ্বালানির জীবনকাল সাত বছর। একবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পর একবারে সব অ্যাসেমব্লি পরিবর্তন করা হয় না। নির্দিষ্ট সময় পরপর ৩০ শতাংশ করে ফুয়েল পরিবর্তন করা হয়। এভাবে ধাপে ধাপে সব অ্যাসেমব্লি বদলানো হয়।

জ্বালানি আসবে যেভাবে: রূপপুরের প্রথম ব্যাচের ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল আনতে গত ৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রটোকল সই করে ঢাকা ও মস্কো। এর আগে গত মে মাসে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন প্রস্তুতি-সংক্রান্ত সনদ সই করে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর জানান, পারমাণবিক জ্বালানি আনতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে আনা হচ্ছে জ্বালানি। নিয়ম অনুযায়ী জ্বালানি পরিবহন করতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) অবহিত করতে হয়। সে আনুষ্ঠানিকতাও শেষ হয়েছে।

জ্বালানি আমদানি ও পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে উন্নীত হবে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, রাশিয়া থেকে কয়েক ধাপে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম আসবে বাংলাদেশে। প্রথম ব্যাচ ইউরেনিয়ামের পর আরও দুই ব্যাচ সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া থেকে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। তিন ব্যাচে প্রথম তিন বছরের জন্য জ্বালানি আসবে। বাংলাদেশে দুই ইউনিটে বছরে লাগবে ৭০-৮০ টন ইউরেনিয়াম রড। বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সাংবাদিকদের জানান, রূপপুর প্রকল্পের কাজ সূচি অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, অক্টোবর মাসে জ্বালানি বাংলাদেশে পৌঁছাবে।

রাশিয়া থেকে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আনা হবে তেজস্ক্রিয় এই জ্বালানি। এরপর কড়া নিরাপত্তা ও গোপনীয়তায় সড়কপথে বিশেষভাবে প্রস্তুত গাড়িতে পাবনার রূপপুরের প্রকল্প স্থানে নেওয়া হবে। দেশে পরিবহনকালে এবং সংরক্ষণের সময় দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য বীমা করা হচ্ছে না। এ দায় সরকার নিচ্ছে। এ জন্য আর্থিক নিশ্চয়তা পত্র ইস্যু করেছে অর্থ বিভাগ।

রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী বছর উৎপাদনে আসার কথা। এ জন্য অক্টোবর মাসেই ইউরেনিয়াম রড চুল্লিতে স্থাপন করা হবে। আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া, যা ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

রোসাটমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটোমসট্রয় এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৪ শতাংশ। দুটি ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার