পুঠিয়ায় ভুয়া হোল্ডিং খুলে সরকারি খাস পুকুর ব্যক্তি মালিকানায়


, আপডেট করা হয়েছে : 20-09-2023

পুঠিয়ায় ভুয়া হোল্ডিং খুলে সরকারি খাস পুকুর ব্যক্তি মালিকানায়

কথায় আছে টাকা দিলে বাঘের চোখও মিলতে পারে ঠিক তেমনি- লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সরকারি খাস পুকুর ব্যক্তি মালিকানায় বন্দোবস্ত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে  রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসে।  ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম কম্পিউটার অপারেটর সজিব ও বাপ্পি জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধ মুলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। ঘটনাটি শুনে সবার চোখ কপালে উঠলেও এমন জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সরকারি খতিয়ানের খাস পুকুর বন্দোবস্তে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন না নিয়ে জালিয়াতি করে ভুয়া হোল্ডিং খুলে খাজনা আদায় করেছে নায়েব খাদেমুল। তিনি চলতি বছরের গত ২৮ আগস্ট খাস পুকুরের ভুয়া হোল্ডিং খুলে অনুমোদন করিয়ে দিয়েছেন। জানাগেছে, শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের  ১১১ নং পচামাড়িয়া মৌজার ৩৮৫/১ নং জমাবন্দিতে সরকারি খাস পুকুরের তালিকাভুক্ত ২৩৪ দাগে ৩২ শতক , ৫৯৮ দাগে ১৮ শতক , ৩১৩ দাগে ৫৫ শতক ৩২৪ দাগে ২৮ শতক জমি ব্যাক্তি মালিকানায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে ভুয়া হোল্ডিং অনুমোদন করে  খাজনার চেক প্রদান করেন । এছাড়াও এই খাজনার আদায় বইতে ভুয়া একটি খারিজ কেস নাম্বার ব্যবহার করা হয়  যার কেস নং  ৮৯৮/৯-১/৮৯-৯০ প্রকৃতপক্ষে উক্ত খারিজ নাম্বারটি একই হোল্ডিং এ আছে, যা অন্য ব্যক্তির নামে। সরবরাহকৃত যে  দাখিলা নং দেওয়া হয়েছে ৮১৮২২৩০৪৩৫৩৩- ২৮/৮/২০২৩ ইং তারিখে পরে কাগজটি পাকাপোক্ত করতে গত ৩ সেপ্টেম্বর একই হোল্ডিং এ বাংলা ১৪৩১-১৪৩৩ সাল পর্যন্ত অগ্রীম খাজনা নেওয়া হয়েছে  । 

আরো জানাগেছে, ভুমি অফিসের আওতাধীন ৭১ নং সোবনপাড়া মৌজার ৪২ নং খতিয়ান এর ১৮১ দাগে ৩৮ শতক হোল্ডিং নম্বর ৪১ মূল পাতায় যে জমির হিসাব ছিল সে পাতাটি ছিঁড়ে নতুন ভাবে হোল্ডিং খুলে বিপক্ষে খাজনা আদায় করেছেন নায়েব খাদেমুল ইসলাম ।  ভুক্তভোগী রশিদ বলেন,জানতে পারি নায়েব খাদেমুল পুরাতন হোল্ডিং বইয়ের পাতা ছিঁড়ে বইতে নতুন হোল্ডিং পাতা লাগিয়ে আমার বিপক্ষের লোকের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেছে। আমি অশিক্ষিত নিরীহ মানুষ ৩-৪ বছর খাজনা দেওয়ার জন্য অফিসে ঘুরছি।

জানাযায়, নায়েব খাদেমুল ইসলাম শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একটানা প্রায় ৫ বছর যাবত কর্মরত আছেন । তিনি কম্পিউটার অপারেটিং কোন কাজ জানেন না। তার পছন্দের কম্পিউটার অপারেটর সজিবকে পাশে বসিয়ে জমিসংক্রান্ত সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। খাজনা পরিশোধ,নামজারি-জমাভাগ ইত্যাদি কাজের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে একেক সময় একেক কথা বলে অযথা হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

এ অফিসে নায়েবকে ঘুষ না দিলে ধানী, পুকুর, বাড়ির জমিতে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে খাজনা আদায় করে থাকেন। তাদের দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিলে মওকুফ করে খাজনা আদায় করা হয়। এছাড়াও ভুমি অফিসের সকল জমির মালিকদের আইডি পাসওয়ার্ড খুলে খাজনা আদায়ের নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মে কোন কাজ হয় না। অফিসের দালালদের নামে আইডি পাসওয়ার্ড খুলে খাজনা আদায় করা হয়।

তবে নায়েব খাদেমুল কম্পিউটার অপারেটর সজিব-বাপ্পি, উমেদার আয়ূব ও লোকমানের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকে অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারনে তাদের বিরূদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। 

এর আগে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা খাদেমুল ও বহিরাগত দালালদের ঘুষ বাণিজ্যের  সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশে দালালদের বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু বিতাড়িত দালালরা কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও নায়েব খাদেমুলের অলৌকিক ক্ষমতা বলে তারা আবার ফিরে আসে এই ভুমি অফিসে।  দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এই ভূমি অফিসের ঘুষ ও দুর্নীতির গল্পের কোনো শেষ নেই। এব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, সরকারি খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় খাজনা নেওয়ার সুযোগ নাই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে। 

জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর মুঠোফোনে বলেন, রের্কডে যদি খাস পুকুর থাকে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়ার সুযোগ নাই। এ বিষয়ে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এবিষয়ে জানতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো: শামীম আহমেদ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার