গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি অপসারণের জন্য রাস্তা কেটে সঞ্চালন লাইন তৈরি করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এক কিলোমিটার পাকা সড়ক কেটে কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। এতে এই পথে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে রাস্তার অংশ কাটা পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এই পথে চলাচলকারী হাজারো মানুষ।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই রাস্তাটি কাটা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থানীয় চেয়ারম্যান এই কাজে সংশ্লিষ্ট। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাস্তা কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষই কাজটি করছে। আর স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, রাস্তা কাটার বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।
স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া নতুন বাজার থেকে হানু মার্কেট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়ক কেটে পানি সঞ্চালনের পাইপ স্থাপনের কাজ করছে রিদিশা নিটেক্স লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানা। তিন দিন ধরে এই কাজ চলছে। মূলত পাইপের মাধ্যমে কারখানার বর্জ্য পাশের লবলঙ্গ খালে ফেলতে এই কাজ চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা সড়কের মাঝখান বরাবর কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। গর্তের ভেতর বসানো হচ্ছে সারি সারি কংক্রিটের পাইপ। বেশ কয়েকটি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। পাইপ বসানোর পর ডাম্প ট্রাকে করে বালু এনে ওই গর্তে ফেলা হচ্ছে। মাঝখান বরাবর সোজা রাস্তাটি কাটা পড়ায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। দুই পাশে কাদামাটির স্তূপ। পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেও দুর্ভোগে পড়ছে স্থানীয়রা।
হানু মার্কেট এলাকার নূরুল ইসলাম বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে। একটি কারখানার স্বার্থ আর টাকার কাছে সবাই জিম্মি। রাতদিন চলছে রাস্তা কাটার কাজ। অথচ স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
একই এলাকার স্কুলশিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, জনপ্রতিনিধিরা জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করতে রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। আর এখানে ভিন্ন চিত্র। রাস্তা নির্মাণের পরিবর্তে রাস্তা কাটা হচ্ছে। কেউ সাহস করে রাস্তা কাটার প্রতিবাদও করছেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতার কাছে মানুষ কতটা অসহায়। রাস্তা কাটার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় রিদিশা নিটেক্স লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তা কাটার বিষয়ে আমি বলতে পারব না। স্থানীয় চেয়ারম্যান কাজ করছেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
জানতে চাইলে গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মাদবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, কারখানা কর্তৃপক্ষ অনুমতি নিয়ে রাস্তা কেটে পানি নিষ্কাশনের লাইন স্থাপন করছে। তারা কীভাবে কোথা থেকে রাস্তা কাটার অনুমতি এনেছে, সে বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি। আমি রাস্তা কাটছি, এটা কেউ বলে থাকলে সেটি মিথ্যা কথা।’
জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা কাটার বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত জানব। অনুমতি না থাকলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ শ্রীপুরের উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা কাটার অনুমতি দিতে পারি না। শুনেছি, কারখানা কর্তৃপক্ষ জেলার প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েছে। তবে কতটুকু রাস্তা কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা জানি না।’
এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে গাজীপুর জেলা প্রকৌশলী আব্দুল বারেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।