দেশে চালু হয়েছে পিতৃত্বকালীন ছুটি


, আপডেট করা হয়েছে : 05-10-2023

দেশে চালু হয়েছে পিতৃত্বকালীন ছুটি

দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু করেছে। এমন উদ্যোগ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার ঝড় বইছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. তানিয়া হকের ভাষ্য, পিতৃত্বকালীন ছুটি একজন পিতার অধিকার। এমন অধিকার বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এমন ছুটি আরও আগেই সর্বস্তরে শুরু হওয়া উচিত ছিল। সরকারিভাবেই পিতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক করা হোক। সন্তান পালন নারীর একার দায়িত্ব নয়। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেরই দায়িত্ব সমান। মাতৃত্বকালীন ছুটির সঙ্গে পিতৃত্বকালীন ছুটিও একজন বাবার অধিকার।


দেখা গেছে, অর্থনীতি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজে যোগদানের হার বাড়ছে সব দেশেই। কিন্তু পরিবারে শিশুদের দেখাশোনা, বয়স্কদের দেখভালের দায়িত্ব মেয়েদের ওপরই বর্তায়। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটি রয়েছে। ভারতে সন্তান পালনের জন্য পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এতে পিতৃত্বকালীন ছুটি হিসাবে একজন বাবা ৩০ দিন বেতনসহ ছুটি নিতে পারেন। এছাড়া গোটা চাকরি জীবনে সন্তানদের দেখভালের জন্য মোট দুবছর ছুটি নিতে পারেন ভারতের নারী কর্মচারীরা।


সিরাজগঞ্জ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান রিফাত-উর-রহমান জানান, সন্তান জন্মের আগে ও পড়ে একজন পিতার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে। সেই পিতাই যদি স্ত্রীর পাশে না থাকতে পারেন-সেটি নিশ্চয়ই অমানবিক। এমনটা ভেবেই ২৬ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভায় পিতৃত্বকালীন ছুটির অনুমোদন দেওয়া হয়, যা কার্যকর হচ্ছে। চলতি মাস থেকেই যদি কোনো শিক্ষক সন্তানের বাবা হন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেতনসহ ১৫ দিনের পিতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। পিতৃত্বকালীন ছুটিকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, এমন একটি উদ্যোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে পারে। শুরুটা যখন হয়েছে, এখন ঢাবিতে তা বাস্তবায়ন করা উচিত। তারপর এক এক করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকসহ কর্মচারী-স্টাফদেরও পিতৃত্বকালীন ছুটির উদ্যোগ নিতে হবে। পিতৃত্বকালীন ছুটি ১৫ দিন নয়, অন্তত ৩০ দিন হওয়া উচিত বলে জানিয়ে ঢাবির সাবেক এ উপাচার্য আরও বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেওয়া উচিত। পরিবারের সব সংকটে পিতারা মুখ্য ভূমিকা রাখে। আর সন্তান জন্মের আগে-পড়ে তার উপস্থিতি নিশ্চয় ওই পরিবারের সদস্য এবং নবজাতকের জন্য নিয়ামক হবে। ওই সময় স্ত্রীর পাশে যদি স্বামী থাকে সেটি পরিবারকে যেমন সমৃদ্ধ করে, বাবা-সন্তানের মধ্যেও একটি বন্ধন তৈরি হয়। নবজাতকের জীবনে বাবা ও মা-দুজনেরই সান্নিধ্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।


এদিকে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে আয়শা বিনতে সিদ্দিকী নামের এক মা ফেসবুক পোস্টে লিখেন, শুধু মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, পিতৃত্বকালীন ছুটি একটি পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারিণী একটি মায়ের জন্য স্বামীর উপস্থিতি সাহস বাড়িয়ে দেয়। স্বামী পাশে না থাকলে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে স্ত্রী, যার প্রভাব পড়ে অনাগত সন্তানের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত-নূর-নূরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারের ওপরও এর প্রভাব পড়বে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে সভা-সেমিনার, আন্দোলনও করতে পারেন। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে তা সহজে বাস্তবায়িত হওয়ার পথ সুগম হবে।


এদিকে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। পরিবার প্রতিপালনের ক্ষেত্রে নারীর একক দায়িত্বের পিতৃতান্ত্রিক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে এ ধরনের পদক্ষেপ অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।


সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো সমাজের একটি বড় অংশের মানুষের চোখে সন্তানের জন্ম দেওয়া ছাড়াও অধিকাংশ দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রেই যাবতীয় দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয় মায়েদের ওপরই। মায়ের পেশা বা স্বাস্থ্য যেমনই থাকুক না কেন, সদ্যোজাত শিশুর যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. তানিয়া হক যুগান্তরকে জানান, এমন উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে পুরুষের ভূমিকা সবেচেয়ে বেশি থাকতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ, এ চ্যালেঞ্জে সামনের সারিতে পুরুষরা না থাকলে ধরেই নিতে হবে তারা নারীদের ঘরেই রাখতে চান। কিন্তু বলা বাহুল্য, এটি পিতৃতান্ত্রিক ধারণার অনুশীলন ছাড়া কিছুই নয়। কারণ, সন্তানের জন্মের পর বাবা-মা দুই অভিভাবকের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এতে কোনো ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যের স্থান নেই। সন্তান পালনের দায়িত্ব সমান হলে দ্রুত স্বাভাবিক কাজে যোগ দিতে পারেন নারীরা।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার