অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে আগামী বছর। নতুন সেই পাঠপদ্ধতি শেখাতে মাধ্যমিক পর্যায়ের সোয়া চার লাখ শিক্ষককে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ স্কিমের আওতায় ৪০৬ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণটির জন্য পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবটি (ডিপিপি) গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে। সে হিসাবে প্রত্যেক শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করতে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৯ হাজার টাকা।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণটি আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এতে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের আগ্রহী শিক্ষক ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজাররা। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষক হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে ২৩-২৬ সেপ্টেম্বর ও উপজেলা পর্যায়ে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন নেয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্য থেকে সাড়ে ১৬ হাজার প্রশিক্ষক বাছাই করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে প্রশিক্ষিত ১ হাজার ১০০ প্রশিক্ষক চলতি মাসেই তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণবিষয়ক স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা প্রায় দুই মাস আগে ডিপিপিসহ চিঠি দিয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং গত রোববার সেটি অনুমোদন পেয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্ষেত্রে ক্লাস শুরুর পর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও এবার আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রশিক্ষণ শেষ করে ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ক্লাস শুরু করা।’
মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে চলতি শিক্ষাবর্ষে। এ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে মাউশির সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অধীনে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে এ স্কিমের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৬৬৮ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। লক্ষ্য ছিল মোট সোয়া চার লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার। তবে ৩ লাখ ২০ হাজারকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হলেও বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েন এক লাখের অধিক শিক্ষক। এ স্কিমে মোট ব্যয় হয় ২৫৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়। বাদ পড়া শিক্ষকদের জন্য চলতি অক্টোবরে আবারো প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চলতি বছর থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়নে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হবে অভিন্ন সিলেবাসে। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন হবে একাদশ শ্রেণীতে। পরিবর্তন আসবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়ও। শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে প্রতি বর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এরপর দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে তৈরি করা হবে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল।
নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এতদিন আমাদের শিক্ষা ছিল মুখস্থনির্ভর। গাইডবই ও কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু নতুন এ শিক্ষাক্রমে তারা দৈনন্দিন জীবন থেকে চারপাশের পরিবেশ থেকে শিখবে। শিক্ষার জন্য এখন আর গাইডবই বা কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আসবে। ফলে আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে শুধু পরীক্ষায় ভালো করার উদ্দেশ্যে পড়ার যে প্রবণতা দেখা যেত সেটি কমবে। তারা এখন শেখার জন্যই পড়বে। এককথায় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’