মূল্যস্ফীতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে নীতি সুদহার বা রেপো রেট একবারেই দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে নীতি সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হচ্ছে। গতকাল বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় রেপো রেট বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত হয়।
ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে যে হারে সুদ দেয়, তাকেই বলা হয় রেপো রেট। এই রেপো রেট একধরনের ‘অস্ত্র’, যা প্রয়োগের মাধ্যমে বাজারে মুদ্রার সরবরাহের লাগাম টেনে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে নীতি সুদহারের এই অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য বলছে, দেশে গত সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার বাড়ার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহে আরও সংকোচনমূলক পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিজ পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রেজারি বন্ড বিলের সুদ বাড়ায় স্মার্ট রেট বৃদ্ধি পাবে। আর ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হিসাবে স্মার্ট সুদের হার নির্ধারণ করায় এখন থেকে আমানত ও ঋণের সুদহারও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা চলতি সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। এই সুদের হার অক্টোবরে ৭ দশমিক ২০ করা হয়। সেখানে নতুন করে নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে সব সুদ বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, নতুন নীতি সুদহার ঘোষণা দেওয়ার আগে গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব ড. তারেক এবং ডেপুটি গভর্নরদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিসংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিকে আরও সংকোচনমূলক করতে হবে।
রিজার্ভ নিয়ে ড. আতিউর রহমান বলেন, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ খানিকটা কমলেও সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নিত্যব্যবহার্য পণ্য ও জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার সহায়তা সতর্কতার সঙ্গে দিয়ে যেতে হবে।
একই সঙ্গে সরকারের ব্যয় কমানোর পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ বেশি হলে খরচ বাড়ে, তা সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। এই ব্যয় অনেক সময় বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে করা হয়; যা ডলারের খরচ বাড়ায় এবং রিজার্ভকে চাপ ফেলে।