স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভার নিতে অক্ষম ২১ কোটির অ্যাপ


, আপডেট করা হয়েছে : 12-10-2023

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভার নিতে অক্ষম ২১ কোটির অ্যাপ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সরাসরি জমা নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও জমা নেবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই অ্যাপ চালু করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করা হয়েছে। অ্যাপ তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এই অ্যাপ বানাতে সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকার মতো। তবে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। কারণ, রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ঘরে বসে এই অ্যাপের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বাধা হবে ১ শতাংশ ভোটারের সম্মতির প্রমাণস্বরূপ তাঁদের সইযুক্ত তালিকা। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ওই তালিকা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়ের আগেই সরাসরি রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, অ্যাপ চালু করার মূল উদ্দেশ্য হলো মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে কোনো প্রার্থী যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হন, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারবেন না। কারণ, ভোটারদের সমর্থনসূচক তালিকার ভার বহন করার সক্ষমতা ওই অ্যাপের না থাকায় তা সরাসরি জমা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকার স্ক্যান কপি আপলোড করেন, তাহলে ভলিউম বেড়ে যাবে।


তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি ১০ লাখ ভোটার থাকেন, কোথাও কোথাও ১১ লাখও আছেন, সেই হিসাবে ১১ হাজার ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত শিট হবে। সব আসন থেকে যদি আরও এমন ৬০০ তালিকা আপলোড করে, তাহলে ওয়েবসাইট তখন কাজ করবে না।’ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘এটি বিমাতাসুলভ কিছু না। এই রকম ৫০০ পৃষ্ঠা যদি আপলোড করতেই হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীই আরও বেশি সমস্যায় পড়বেন।’

ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক বলেন, সব জায়গায় ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভালো নয়। তাই ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা আপলোড করতে সমস্যা হতে পারে। সেই কারণে এই তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।


বিষয়টি নজরে আনা হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘একটি সিস্টেম চালু করার আগে দুটি জিনিস করা জরুরি। একটি হচ্ছে এটির নিরাপত্তা, আরেকটি যথার্থতা নির্ণয়। এখন আপনি যদি হাফ অ্যানালগ, হাফ ডিজিটাল সিস্টেম করেন, তাহলে তো হলো না। স্বতন্ত্র প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যেতেই হচ্ছে। এটি করার আগে পুরো সিস্টেমটাকে অটোমেটেড করা প্রয়োজন ছিল।’ তিনি বলেন, ‘নেটওয়ার্কের সমস্যা হবে কেন? এটি তো ইমেজ আকারে আপলোড করবে। এখানে তো ভিডিও আপ করবে না। ইমেজ যত বড়ই হোক, অবশ্যই আপলোড করা সম্ভব। খাগড়াছড়ির সাজেক একটি দুর্গম এলাকা। সেখান থেকেও আমরা ইন্টারনেটে কথা বলছি।’ বিভিন্ন সময় পেশিশক্তি ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই ইসি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ইসির প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে না।


এ বিষয়ে ড. তোফায়েল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি ভালো। এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সম্মতির তালিকা জমা দেওয়ার জন্য একাধিক সুযোগ রাখা উচিত। যেহেতু মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা পাওয়ার ঘটনা ঘটে, তাই এই তালিকা অনলাইন, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা প্রয়োজন।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার