দেশের অগ্রযাত্রার এক ঐতিহাসিক মাইলফলকের সাক্ষী পাবনাবাসী। স্থানীয় উৎফুল্ল মানুষ বলছেন, পারমাণবিক স্থাপনাটির নির্মাণপর্বেই শুভ প্রভাব পড়ে তাদের জীবন ও অর্থনীতিতে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বদলে যাবে পুরো উত্তরবঙ্গের চিত্র।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর এমনটিই ভাবছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্জন করল বহুল প্রতীক্ষিত পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা। এই গৌরবময় স্থাপনার সাক্ষী হলেন পাবনার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল প্রকল্পটি হচ্ছে পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা রূপপুর গ্রামে। প্রকল্পের আবাসিক এলাকা ‘গ্রিন সিটি’ নির্মাণ করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দিয়াড় সাহাপুর গ্রামে। সাত বছর আগেও দিয়াড় সাহাপুর গ্রামে কোনো উঁচু ভবন ছিল না। ব্রিটিশ আমলে পুরো রূপপুর জঙ্গলময় থাকার কারণে দিনের আলোয় মানুষ চলতে ভয় পেত। প্রথম ব্রিটিশরাই এলাকাটি পরিষ্কার করেছিল। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দিনে দিনে রূপপুর গ্রামকে শহরে পরিণত করেছে। বদলে দিয়েছে গ্রামের দৃশ্যপট।
স্থানীয়রা জানান, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে কয়েক হাজার বিদেশির আনাগোনা ও ২০ হাজারেরও বেশি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানে বদলে গেছে পাবনাসহ আশপাশের এলাকার অর্থনীতি। গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের শপিং মল, রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট। পরমাণু জ্বালানির প্রাপ্তিতে রূপপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিশ্চয়তা জেনে বিনিয়োগ বেড়েছে ঈশ্বরদী ইপিজেডেও। উৎপাদন শুরু হলে যার প্রভাব পড়বে পুরো উত্তরবঙ্গেই।
বাংলাদেশের পরমাণু যুগের সূচনার অংশীদারিত্বে পাবনার প্রত্যন্ত রূপপুরকে বিশ্বময় পরিচিতি দেওয়ায় কৃতজ্ঞ মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়নের সারথি রূপপুরের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঞ্চল্য পেয়েছে।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, ২০১৩ সালে পাবনায় রূপপুর প্রকল্প যখন শুরু হয় তখন পুরো জায়গাটি ছিল ধু-ধু বালুচর। গোচারণ ভূমি। সেখানে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হলে এখানকার অর্থনীতির দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মানুষের কর্মসংস্থানে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, রূপপুরের বিদ্যুৎ ঈশ্বরদী অঞ্চলের অর্থনীতিতে যে ব্যপক পরিবর্তন আনবে তার আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে, রয়েছে রেল যোগাযোগ। ইপিজেডে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন করে অর্থলগ্নি করছে। মানুষের কর্মসংস্থানে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যেই রূপপুর কেন্দ্রিক আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ড শপগুলো তাদের শোরুম করেছে। প্রায় ৫ হাজার রাশিয়ান এখানে থাকায় বিভিন্ন বিদেশি পণ্যেরও কেনাবেচা হওয়ায় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখছে এই রূপপুর প্রকল্প।