দীর্ঘদিন পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির জট খুলেছে। এখন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন। আগে এই পদোন্নতি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ফলে অনেকেই প্রাথমিকে চাকরিতে এসেও পদোন্নতিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকায় তারা প্রাথমিকে স্থায়ীভাবে চাকরি করতে চাইতেন না। এ কারণে অনেক সময়েই দেখা যেত প্রাথমিকে শিক্ষকের একটা সঙ্কট লেগেই থাকত। তবে এখন থেকে সহকারী শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাবেন বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রায় ৪৫০ শিক্ষক। গতকাল মঙ্গলবারও ৭৩ জন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর আগে ৯ অক্টোবর সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষকের পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৬৫ জন। এর আরো দুই মাস আগে ৩ আগস্ট পদোন্নতি পেয়েছেন ২০১ জন। সব মিলিয়ে গত আড়াই মাসে পদোন্নতি পেয়েছেন ৪৩৯ সহকারী শিক্ষক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র মতে সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে ৭৩ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কবির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ পদোন্নতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, মনোহরদী উপজেলার ৭৩ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হলো। পদোন্নতি পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নরসিংদী জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে যোগদান করতে হবে।
এ তারিখের মধ্যে কেউ যোগাযোগে ব্যর্থ হলে তিনি পদোন্নতি যোগ্য নন বলে বিবেচিত হবেন। একইসাথে পদোন্নতির আদেশ বাতিল হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
সূত্র আরো জানায়, যেসব শর্তে দেয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের তারিখ থেকে ১ বছর শিক্ষানবিশকাল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং শিক্ষানবিশকাল সন্তোষজনক হলে তাদের স্থায়ীকরণ করা হবে। শিক্ষানবিশকালে তাদের আচরণ ও কর্ম সন্তোষজনক না হলে অথবা কর্মদক্ষতা অর্জনের সম্ভাবনা না থাকলে কর্তৃপক্ষ তাদের পূর্বের পদে প্রত্যাবর্তন করাতে পারবেন।
একই সাথে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, নরসিংদীর কাছে যোগদান করতে হবে। এর মধ্যে কেউ যোগদানে ব্যর্থ হলে তিনি পদোন্নতি গ্রহণে সম্মত নন বলে গণ্য হবেন এবং তার পদোন্নতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। যোগদান পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে যোগদান করা প্রধান শিক্ষকদের অনুকূলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পদায়ন আদেশ জারি করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্বে/ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োজিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের কর্মরত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদেই পদায়ন করতে হবে।
অপর দিকে গত ৯ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, সখিপুর, ধনবাড়ি ও বাসাইল উপজেলায় থেকে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষক পদে ১৬৫ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। সারা দেশে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির অংশ হিসেবে এ পদোন্নতি দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ে উপসচিব কবির উদ্দিন জানিয়েছেন, মির্জাপুর, সখিপুর, ধনবাড়ি ও বাসাইল উপজেলার ১৬৫ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৩ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের তিন উপজেলার ২০১ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রতার অবসান হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতির এ অফিস আদেশ জারি করা হয়। পদোন্নতি কার্যক্রমে মামলার পাশাপাশি সারা দেশের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতা ছিল। সঙ্কট উত্তরণে ‘সমন্বিত গ্রেডেশন ব্যবস্থাপনা’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রেডেশন লিস্ট চূড়ান্ত করা হয়। একই সাথে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান সংক্রান্ত তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের চাকরি বই, ই-প্রাইমারি স্কুল সিস্টেম, সমন্বিত গ্রেডেশন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড বাজেটিং ও অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে সন্নিবেশ করতে হবে।