প্রতারকদের ফাঁদে প্রবাসীরা


, আপডেট করা হয়েছে : 23-10-2023

প্রতারকদের ফাঁদে প্রবাসীরা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার মোহাম্মদ বাহার মিয়া পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৮ সালে সৌদি আরব যান। ২০২১ সালের ৮ মে তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আর বেরোতে পারেননি। কারণ বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে সসপ্যান ও টর্চলাইটের ভেতর কাঁচা সোনা লুকিয়ে আনার অভিযোগে।


যদিও সেই সসপ্যান বা টর্চলাইট তার ছিল না। এক প্রতিবেশী সৌদি আরবে সেগুলো তাঁকে দিয়েছিলেন পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে। তার ভেতরে কিছু ছিল কি না, তা তিনি জানতেন না। সোনা পাচারের মামলায় বাহারকে ৯ মাস কারাগারে থাকতে হয়। এখনো তাঁর টাকা তো খরচ হচ্ছেই, মামলা বিচারাধীন থাকায় সৌদি আরবেও আর যেতে পারেননি।


বাহারের মতো অনেক প্রবাসী শ্রমিককে দেশে এসে এভাবে চোরাকারবারির তকমা পেতে হচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চোরাকারবারিরা সব সময় প্রবাসীদের টার্গেট করে। সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী শ্রমিকেরা চোরাকারবারিদের খপ্পরে পড়েন। চোরাকারবারিরা নানা কৌশলে বিভিন্ন ডিভাইস ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ভেতর বিশেষ কায়দায় সোনা, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক লুকিয়ে প্রবাসীদের হাতে ধরিয়ে দেয়।


চোরাকারবারিরা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা অনুনয়-বিনয় করে চোরাই সামগ্রীর প্যাকেট বা পার্সেল বাড়িতে পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছে দিয়ে দেয়। নিরীহ প্রবাসীরা জানতেই পারেন না সেসব প্যাকেটে কী আছে। দেশের বিমানবন্দরে এসে ধরা পড়ে তাঁদের জেল-জরিমানার মুখে পড়তে হয়।


এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘প্রবাসীরা যাতে চোরাকারবারিদের খপ্পরে না পড়েন, সে জন্য দেশে ও বিদেশে অনেক কিছুই করছি। এরপরও যদি কেউ কোনো বড় ধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে তাঁদের পাশে থাকব। আমরা সব সময় এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।’


বাহারের বিরুদ্ধে মামলায় টাঙ্গাইলের কালিহাতীর ময়েজ ওরফে মজরকেও আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ময়েজ সৌদিতে বসে বাহারকে সসপ্যান ও টর্চলাইট দিয়েছিলেন। জামিনে থাকা বাহার বলেন, ‘সৌদিতে আমার পাশের একটি বাড়িতে ময়েজ থাকত। সে দুইটা জিনিস আমাকে দিয়েছিল, চক্ষু লজ্জায় নিয়ে এসেছি। আর কিছু জানি না। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’


চোরাচালান প্রতিরোধে বিমানবন্দরে এপিবিএনও কাজ করে। এপিবিএনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বুঝি, অনেকে সরল বিশ্বাসে অন্যের ব্যাগ বা পার্সেল নিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ আইনেই রয়েছে, চোরাই পণ্য যার দখলে থাকবে তিনিই আসামি।’


যশোরের চৌগাছার নুরুন্নবী মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ভালো চাকরি না পাওয়ায় দেশে ফিরে আসতে ৯ অক্টোবর রওনা দেন। এর আগে তাঁকে ফ্রি টিকিট দেওয়ার কথা বলে আবু ইউসুফ একটি লাগেজ দেন। রাতে নুরুন্নবীকে আনতে শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে বাবা সৈয়দ আলী মণ্ডল নিখোঁজ হন। পরে র‍্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা জানান, নুরুন্নবী যতক্ষণ লাগেজ না দেবে, ততক্ষণ তাঁর বাবাকে আটকে রাখতে চেয়েছিল চক্রটি।


ব্র্যাকের তথ্যমতে, অবৈধ প্রবাসী শ্রমিকেরা চোরাকারবারিদের খপ্পরে বেশি পড়েন। তাদের আয় কম থাকায় দেশে ফিরে আসার সময় চেষ্টা করেন টাকা বাঁচাতে। সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় চোরাকারবারিরা।


ব্র্যাকের অভিভাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, চোরাকারবারিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রি টিকিট দেওয়ার ঘোষণা দেয়। বিনিময়ে কোনো ব্যাগ বা পার্সেল দিতে চায়। এভাবে চোরাকারবারিরা সুযোগ নেয়। এ জন্য প্রবাসীদের সচেতন হতে হবে।  



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার