মেট্রোরেলের পুরো সুবিধা মিলবে শিগগিরই


, আপডেট করা হয়েছে : 26-10-2023

মেট্রোরেলের পুরো সুবিধা মিলবে শিগগিরই

বর্তমান সরকারের আমলে যানজট নিরসনে আশার আলো দেখাচ্ছে একের পর এক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন। ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের পুরোপুরি সুবিধা পাবেন নগরবাসী। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এতদিন পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল এর যাত্রাপথ। ৪ নভেম্বর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথের যোগাযোগে সূচনা হবে নতুন অধ্যায়ের। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে ঢাকাবাসীর সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। ভাড়া ১০০ টাকা। যাত্রীরা উঠতে নামতে পারবেন নিম্নোক্ত ১৬টি স্টেশন থেকে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল।


মেট্রোরেল পরিচালনাকারী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে শুরুতে কেবল সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ট্রেন চলবে। পরে ধীরে ধীরে বাড়বে সময়। প্রথম দিন থেকে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলে যাত্রী ওঠানামা করবে। এই অংশে স্টেশনের সংখ্যা সাত। এর মধ্যে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাদ পড়ছে শুরুতে। যে তিনটি স্টেশন দিয়ে এ অংশের প্রস্তুতি চলমান, তা একদম শেষ পর্যায়ে। এখন শেষ পর্যায়ের কাজগুলো চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি স্টেশনগুলো চালু করতে সর্বোচ্চ তিন মাস সময় প্রয়োজন হতে পারে।


সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধু যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় ঢাকা শহরে। যানজট খেয়ে ফেলে দেশের জিডিপির একটি বড় অংশ। কমে আসে মাথাপিছু আয়। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, যানজটের কারণে প্রতিদিন গড় ক্ষতি ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা। গত এক যুগে বছরে ঢাকার গড় ট্রাফিক স্পিড ঘণ্টায় ২১ কি.মি. থেকে নেমে পাঁচ কি.মিতে দাঁড়িয়েছে এবং এই গতি আরও নেমে যাওয়ার কথা বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। 


 


আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যানজট কমিয়ে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে কাজ শুরু করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাতে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট পাঁচটি প্রকল্পে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়। আর এ উদ্যোগ শুরু হয় এমআরটি লাইন-৬-এর হাত ধরে।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বলেন, গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি হলো উন্নয়ন। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই এত সব উন্নয়ন কর্মকা  আওয়ামী লীগ করতে পেরেছে। ভোট পেয়ে পাস করে গেলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। আমরা জানি, পাঁচ বছর পর আবার জনগণের কাছে আমাদের যেতে হবে ভোটের জন্য।


বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে এমআরটি লাইন-৬। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এই পথে যাত্রীদের সময় লাগছে মাত্র ১৩ মিনিট। এমআরটি লাইন সিক্সের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। পরিকল্পনা ছিল উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। পরে ১.১৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত হয় কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত নেওয়ার। মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। বর্ধিত ১.১৬ কিমির জন্য ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মধ্যে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশ চালুর লক্ষ্য ঠিক করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ অংশের কাজ শেষ হলে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরা মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন।


ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরী ও তৎসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ছয়টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা-২০৩০ গ্রহণ করেছে সরকার। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ভয়াবহ যনজটের কবল থেকে মুক্তি মিলবে নগরবাসীর এমনটাই আশা করা হচ্ছে।


৪ নভেম্বর উদ্বোধনীর সময়সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মেট্রোতে চড়ে মতিঝিল যাবেন। সেখানে নামফলক উন্মোচন করবেন। এরপর মেট্রোতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, সুধী সমাবেশ ঘিরে ওই দিন রাজধানীতে স্মরণকালের সর্ব বৃহৎ জমায়েত করবে আওয়ামী লীগ।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার