চারপাশ থেকে গাজা শহর ঘিরে ফেলার পর এবার হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের দিকে নজর দিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গাজায় মাটির নিচে কয়েক শ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে জিম্মিরাও রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান হামলা ও স্থল হামলার পর অভিযানকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অংশ হিসেবে আজ বুধবার সুড়ঙ্গগুলোয় হামাস যোদ্ধা ও জিম্মিদের খুঁজে বের করতে অভিযান শুরু করছে আইডিএফ। তারা জানিয়েছে, হামাসের শক্তিশালী ঘাঁটি গাজা এখন সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলেছে তারা। এখন জনবহুল শহরটির প্রাণকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আইডিএফ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এর আগে বলেছিলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু একটাই—গাজায় হামাসের সন্ত্রাসীরা, তাদের নেতা, অবকাঠামো, বাংকার, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ রক্ষার কক্ষ। এবার সুড়ঙ্গের বিশাল ও জটিল নেটওয়ার্কে অভিযান প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানান, ইসরায়েলের সামরিক প্রকৌশলীরা গাজার তলদেশে কয়েক শ কিলোমিটার বিস্তৃত হামাস নির্মিত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে বিস্ফোরক যন্ত্র ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, ‘হানাদার বাহিনী’ আইডিএফের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পেরেছে বলে দাবি করেছে হামাস। সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ও স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হামাস যোদ্ধাদের কাছ থেকে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ঘাজি হামাদ বলেন, ‘বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা ছাড়া অন্য কোনো সামরিক অর্জন এই মুহূর্তে আছে কি না, তা পারলে প্রকাশ করুক ইসরায়েল। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। গাজাকে ধ্বংস করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও জায়নবাদীদের গলার কাঁটা হয়েই থাকবে গাজা।’
হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ভূগর্ভস্থ বিশাল সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করলে জিম্মিদের জীবন সংশয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইডিএফ। জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলেও একাধিকবার জানিয়েছে ইসরায়েল।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এ ছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৩৪ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস। এর মধ্যে সেনাসদস্য ছাড়াও রয়েছে বেসামরিক নাগরিক এবং কয়েকজন বিদেশি। এ পর্যন্ত চারজন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। গত শনিবার হামাস এক বার্তায় বলে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৬০ জনেরও বেশি নিখোঁজ রয়েছে। তাদের ২৩ জনই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০ হাজার ৩২৮। এই নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৪ হাজার ২৩৭ জন শিশু।