পদোন্নতির উৎসব ভোটের আগে


, আপডেট করা হয়েছে : 13-11-2023

পদোন্নতির উৎসব ভোটের আগে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচের তফশিল ঘোষণার আগেই সরকার প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছে। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ভোটের আগে গত কয়েক মাসে এই তিন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে ১৬০৮ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বেশ ‘উদার’ভাবেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও মেধাবী কিছু কর্মকর্তা বঞ্চিত হওয়ায় প্রায় পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 


তালিকার শেষদিকের কর্মকর্তারা নতুন পদে যাওয়ার আনন্দে ভাসলেও, অনেক মেধাবী বঞ্চিত হওয়ার কষ্টে জর্জরিত। প্রশাসন বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটা নতুন নয়। মেধাবীদের বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা পুরোনো। তাদের মতে, পদোন্নতির সময়টা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতে পারে। সামনে নির্বাচন, এ সময় পদোন্নতি নিয়ে মানুষ ভাবতেই পারে সরকার এদের হাতে রাখার জন্য খুশি করতে শেষ সময়ে এত আয়োজন। তবে সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যায় পদোন্নতির যৌক্তিকতা উঠে এসেছে।


জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, পদ শূন্য থাকলে এবং পদোন্নাতি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তা থাকলে তা দিতে কোনো সমস্যা নেই। এমন কি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরও যদি পদ থাকে এবং পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তা থাকে তাকে পদোন্নতি দিতে হবে। কিন্তু পদ নেই তারপরও পদোন্নতি দেওয়া উচিত নয়। সুপারনিউমারারি পদে কখনই পদোন্নতি দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এই সাবেক আমলা। 


জানা গেছে, মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪, যুগ্মসচিব পদে ২২১, উপসচিব পদে ১৭৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়। এতে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ২৯তম ব্যাচের প্রথমসহ বেশ কিছু মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন। 


তবে যারা উপসচিব হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৩ জন আছেন মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিব। পুলিশ ক্যাডারের অতিরিক্ত ডিআইজ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৫২, পুলিশ সুপার পদে ১৭৭ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে ৪৬ কর্মকর্তা এবং শিক্ষা ক্যাডারের ৬৯০ কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। নভেম্বরেই পুলিশ ক্যাডারের তিন পদে এবং প্রশাসনের উপসচিব পদে পদোন্নতি হয়।


বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসনে কিছু বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে শূন্য পদ ছাড়াও পদোন্নতি, সুপারনিউমারারি পদ সৃজন ইত্যাদি। গত কয়েক মাসে অতিরিক্ত সচিব থেকে উপসচিব পর্যন্ত পদোন্নতি অনুমোদিত পদের চেয়ে বেশিই হয়েছে। এটা এবারই প্রথম তা নয়, আগেও হয়েছে। তবে প্রশাসন ক্যাডারের কিছু বিষয় পুলিশ ক্যাডারেও প্রভাব পড়েছে, যেমন সুপারনিউমারারি পদ সৃজন। এক্ষেত্রেও সরকার অনুমোদন দিয়েছে। 


কাজেই পদোন্নতি ঘিরে হাসি-কান্না বা আনন্দ-বেদনা, সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি সবই পুরোনো। কিছুটা হলেও নতুন হচ্ছে সরকারের চলতি মেয়াদের শেষদিকে দফায় দফায় পদোন্নতি। এই সময়টা ঘিরেই চলছে আলোচনা। যে যার মতো এসবের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই প্রায় একই সুরে কথা বলছেন। তাদের কেউ বলছেন শূন্য পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া মোটেই ঠিক হচ্ছে না। কেউ বলছেন ভোটের আগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সরকারের উদ্যোগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।


বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন প্রশাসন পুলিশ এবং শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত কয়েক মাসে এই তিন ক্যাডারের বিভিন্ন পদে মোট ১৬০৮ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন পদ প্রাপ্ত সবাই সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট মানুষ খুশি মনে আগ্রহী হয়ে অনেক কিছুই করে থাকে। যা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যায় না। 


তবে কিছুটা অসন্তোষ আছে মাঠপর্যায়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত। তারা পদোন্নতির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এখন খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করতে চাচ্ছেন। প্রায় একই ধরনের অসন্তোষ আছে অন্যান্য ধাপের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যেও।


জানা গেছে, প্রশাসনে বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের পদ ২১২টি। প্রেষণ পদ ১২৫টি। সর্বমোট অনুমোদিত পদ ৩৩৭টি। ১২ মে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে ১৪৪ জনকে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৩৭ পদের বিপরীতে কর্মরত অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা ৪২৬। যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ ৫০২টি। 


সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে ২২১ জনকে যুগ্ম সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৯৪৬ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিসাবে কর্মরত। অনুমোদিত পদের চেয়ে ৪৪৪ জন কর্মকর্তা বেশি পদোন্নতি পেয়েছেন। এদের অধিকাংশই আগের পদেই যুগ্ম সচিব হিসাবে কাজ করছেন। 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার