পবিপ্রবিতে রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ ৯ পদে একই ব্যক্তি


, আপডেট করা হয়েছে : 16-11-2023

পবিপ্রবিতে রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ ৯ পদে একই ব্যক্তি

বিভিন্ন অনিয়ম ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান চেয়ে গত ১২ অক্টোবর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেও এর সমাধান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং শেষ সময়ে এসে কিছু ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার খবর পাওয়া গেছে।


শিক্ষক সমিতি ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, একই ব্যক্তি (অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের পাশাপাশি প্রশাসন ও সংগঠনের ৯টি পদে থাকায় ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। তাঁর ইন্ধনে কিছু লোক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও অনিয়ম করছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ মে সন্ধ্যায় কৃষি অনুষদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মণ্ডলকে লাঞ্ছিত করেন অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ও মাস্টাররোল কর্মচারী মো. শামসুল হক রাসেল। এ ঘটনায় অভিযোগ দিয়েও বিচার পাননি ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত দুজন রেজিস্ট্রারের বন্ধু।


আনোয়ারুলের দাবি, রেজিস্ট্রারের ইন্ধনে তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন ওই দুজন। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করা হলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে তা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।


প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় সম্প্রতি তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।


বাসা বরাদ্দেও স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। বাসা পেতে হয়রানির শিকার অধ্যাপক কানিজ রোখসানা সুমি বলেন, ‘আমাদের নামে নোটিশ দিয়েও বি-টাইপের বাসাটি দেননি। স্বপন নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তাঁর (রেজিস্ট্রার) সম্পর্ক রাখতে ওই নেতার বোনকে ১০ জন কর্মকর্তা গিয়ে জোরপূর্বক বাসায় উঠিয়ে দেন। অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো ১১ মাস হয়রানির শিকার হয়েছি।’ 


এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।


এ ছাড়া গত ১০ মে ফিজিওলজি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে কোর্স টিচারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মিল্টন তালুকদার রেজিস্ট্রারের বন্ধু। মোস্তাফিজুর বলেন, ‘ক্যাম্পাসের কিছু শিক্ষকের ইন্ধনে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্টে ফেল করা শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সম্মানহানি করেছে। অথচ ওই কোর্সেই আমার পরিবর্তে নতুন টিচার অধ্যাপক আহসানুর রেজাকে কোর্স রিপিট লিখিত পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ওই পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্রের হুবহু নকলসহ এক শিক্ষার্থী ধরা পড়ে, কিন্তু প্রশাসন ওই ঘটনায় গত দুই মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’


ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে খোঁজ নিলে তদন্ত কমিটি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।


আরেক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এক শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে না দেওয়ায় গত ১৪ আগস্ট দুপুরে কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এস এম হেমায়েত জাহানকে পরীক্ষার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তালা মেরে অবরুদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও শিক্ষকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করলেও খোঁজ নেননি সন্তোষ বসু। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেও আজ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


হেমায়েত জাহান বলেন, ‘একই ব্যক্তি রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর হলে কখনো সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।’


এদিকে ক্যাম্পাসে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়লেও নীরব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মো. মমিন উদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যা নামতেই ক্যাম্পাসে বহিরাগত মাদকসেবীদের আসর বসে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব। এক ব্যক্তি একাধিক পদে থাকলে যা হয়, তা-ই হচ্ছে।’ 


যেসব দায়িত্বে সন্তোষ কুমার

রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য, ক্যাফেটেরিয়া মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক, কর্মচারী সিলেকশন বোর্ডের সদস্য, শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব, উত্তরণ সমিতির সভাপতি, বাঁধনের প্রধান উপদেষ্টা ও আলোক তরির উপদেষ্টা অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু। 


শিক্ষক সমিতির বক্তব্য

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর একই ব্যক্তি দুটি কাজ করতে পারেন না। তাঁর ইন্ধনে শিক্ষকদের সঙ্গে একের পর এক হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটে। বিষয়গুলো ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়কে জানাব।’


তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আংশিক কিছু দাবির সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নিলেও সম্পূর্ণ দাবি এখনো মেনে নেয়নি। তাই আগামী শনিবার আমরা সাধারণ সভা ডেকেছি এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’


সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় অযোগ্য লোকজন বসিয়ে রাখা হয়েছে। স্মারকলিপি দেওয়ার পর দাবিগুলো মেনে নিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় নেন উপাচার্য। সময় শেষ হয়েছে। শিগগির লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার