রাস্তায় যারা আন্দোলন করছে তাদের যেমন মানবাধিকার আছে, তেমনি পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করছে তারও মানবাধিকার আছে— বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
আজ শনিবার ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় প্যানেল আইনজীবীগণের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই কর্মশালার আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক কর্মী, রাস্তায় যারা আন্দোলন করছে তাদের যেমন মানবাধিকার আছে, তেমনি পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করছে তারও মানবাধিকার আছে। নিশ্চয় সংবিধান সেই গ্যারান্টি দিয়েছে– রাস্তায় আন্দোলন করবেন, মিটিং–মিছিল সবই করবেন। তবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ তিনি (রাজনৈতিক কর্মী) যদি করেন পুলিশের ওপর আর পুলিশও যদি অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে দুটোই অপরাধ। দুটোই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দেশের মানবাধিকার চরম লঙ্ঘন হয়েছে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তারা যদি একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে না পারেন, তারা যদি মানবাধিকারের লঙ্ঘন কোনটা বুঝতে না পারেন, তাহলে এই দেশের মানুষের আরও অনেক কষ্টকর ভবিষ্যৎ জীবন পার করতে হবে। আশা করব সকলেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে কোনদিন সুন্দর সমাজ হবে না। তাই সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা একে অপরের প্রতি সহনশীল হবেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মৌলিক অধিকার আর মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক অধিকার একেক দেশে একেক রকম, কিন্তু মানবাধিকার সারা বিশ্বে এক রকম। আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে মানবাধিকারের ধারণা নানা মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার প্রয়োগ হয় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে। এজন্য আইন বিভাগ আছে আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে। বিচার বিভাগ আছে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনে। আর সেই আইন প্রযুক্ত হয় আইনজীবীদের কর্মকুশলতায়। মানবাধিকারের সঙ্গে তাই আইনজীবীদের সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। বিচার প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালে মনে রাখবেন আপনি মানবাধিকার কর্মী। নিজ পেশার প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হোন।
মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা কখনো পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন? সেখানে গেলে শুনতে পাবেন মানবাধিকারের কি লঙ্ঘন। পরিবারের সদস্য, আরেক ভাইকে পাগল বানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখেছে সম্পত্তির জন্য। সবাই না, একটি অংশ।’
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় প্যানেল আইনজীবীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে মর্মে কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। কমিশন সরকারি নয়, স্বাধীনভাবে কাজ করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কমিশনকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেকেই আদালতে আসতে পারেনা। এরকম জনগোষ্ঠীসহ গৃহকর্মী, মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তায় আইনজীবীদের কাজ করার আহ্বান জানান।