চারটি বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যবসা ছেড়ে চাকরিতে এমপি এনামুল


, আপডেট করা হয়েছে : 06-12-2023

চারটি বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যবসা ছেড়ে চাকরিতে এমপি এনামুল

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্যের কমেছে আয়। এনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগের হলফনামাগুলোতে ব্যবসা দেখালেও এবার তিনি চাকরি দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালে কোনো গাড়ি না থাকলেও ২০২৩ সালে তিনি তিনটি চারটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। তার স্ত্রীর নামেও আছে একটা বিলাসবহুল গাড়ি।


২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য এবার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। রাজশাহী-৪ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন তিনি। নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়া হলফনামায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।


সংসদ সদস্য হওয়ার আগে হওয়ার আগে এনামুল হকের ব্যাংক ঋণ ছিল ৩৭ কোটি টাকার ওপর। ২০১৩ সালে তিনি পুরোপুরি ঋণমুক্ত হন। তবে ২০১৮ সালের হলফনামায় আবার ঋণ দেখান তিনি। আগে গাড়ি না থাকলেও এমপি হওয়ার পর লম্বা হয়েছে তার গাড়ির বহর। ২ কোটি টাকার বেশি দামের গাড়িও রয়েছে তাঁর।


২০০৮ সালের হলফনামায় এনামুল হক ১১টি ব্যাংকে একক, যৌথ ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/পরিচালক হিসেবে ঋণ দেখান ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তবে ২০১৩ সালের হলফনামায় ঋণ দেখাননি তিনি। মাত্র পাঁচ বছরে সব ঋণ থেকে মুক্ত হন। ২০১৮ সালে আবার তিনি ঋণ দেখানো শুরু করেন। ওই বছর তিনি বাড়িভাড়া থেকে আয় দেখান ১৫ লাখ, ব্যবসা থেকে ২৪ লাখ ও সংসদ ভাতা ১৬ লাখ টাকা। নগদ দেখান ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮। স্ত্রীর আয় দেখান ১ কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেখান ৭ লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ টাকা। স্ত্রীর নামে দেখান ৪ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার দেখান নিজের ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। নির্ভরশীলের নামে শেয়ার দেখান ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তখন আমানতে তাঁর বিনিয়োগ ছিল ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৬ ও স্ত্রীর ৭৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। তখন শুধু এনা বিল্ডিং প্রডাক্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংকে তাঁর ঋণ ছিল ২১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৪৮৬ টাকা।


এবার এনামুল হকের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংক আমানত ৫৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৪২ টাকা। চাকরি থেকে আয় ৩২ লাখ ৩ হাজার ওবং সংসদ ভাতা ২৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে নিজের ২৫ লাখ ও স্ত্রীর ৩ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা নিজের ১১ লাখ ৫৯ হাজার ও স্ত্রীর ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কোম্পানির শেয়ার নিজের ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার ও স্ত্রীর ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। আর নির্ভরশীলের শেয়ার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার। এ ছাড়া স্থায়ী আমানতে স্ত্রীর বিনিয়োগ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।


২০০৮ সালে তার একটি গাড়িও ছিল না। এবার তাঁর নামে হয়েছে একটি টয়োটা হার্ড জিপ, যার দাম ৬৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা, একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ হার্ড জিপ, যার দাম ২ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং একটি টয়োটা হার্ড জিপ, যার দাম ৯০ লাখ টাকা।


স্ত্রীর নামেও ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার টয়োটা জিপ দেখেয়েছেন তিনি। নিজের ৪০ তোলা ও স্ত্রীর ৪০ তোলা স্বর্ণ থাকার কথা হলফনামায় লিখেছেন তিনি। এমপি এনামুল এবার কৃষি জমি দেখিয়েছেন ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। তার অকৃষি জমি রয়েছে ৬৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকার। বর্তমানে ব্যাংকে তাঁর ঋণ ৩২ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।


২০০৮ সাল থেকে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন এনামুল হক। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এ বছর তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে।


রাজশাহী-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী লীগের এই নেতা হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। তারও একটি বিলাসবহুল জিপ, একটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল আছে।


আবুল কালাম আজাদ কৃষিখাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বছরে মৎস্য খামার থেকে আসে ১ কোটি এক লাখ টাকা। এছাড়াও পৌর মেয়র হিসেবে বছরে সম্মানী পান ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই প্রার্থীর নগদ টাকা আছে ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকে আছে ৫০ হাজার টাকা। ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৭ টাকার ডিপিএস আছে। ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে স্ত্রীর নামে। স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ আছে।


এই প্রার্থীর বিলাসবহুল জিপের দাম দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের দাম দেখিয়েছেন ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০৭ টাকা। ইলেকট্রনিক্স পণ্য আছে ৮০ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র আছে ৬০ হাজার টাকা। তার একটি পিস্তলের মূল্য ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ও শর্টগানের মূল্য দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।


তার দান সূত্রে পাওয়া কৃষি জমি আছে ৪ দশমিক ৪০ একর। যার মূল্য দেখিয়েছে ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। অকৃষি জমি আছে ৩ দশমিক ৪৫ একর জমি যার মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে দশমিক ৬১৮ একর জমি। যার মূল্য ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা। একটি আবাসিক ভবন আছে যার মূল্য দেখিয়েছেন ১৭ লাখ টাকা। নির্মানাধীন বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য দেখিয়েছেন ৫০ লাখ টাকা। তার মৎস্য খামার আছে ১০টি। যা সবগুলো লিজ নেওয়া।


জাতীয় পার্টির প্রার্থীর আবু তালেব প্রামাণিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তিনি একটি ফৌজধারী মামলার আসামী। মামলাটির এখনও বিচার চলছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর বছরে আয় ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। নগদ টাকা আছে ২২ লাখ ২২ হাজার। একটি মোটরসাইকেল ও স্ত্রীর আছে ১৫ ভরি স্বর্ণ। আসবাবপত্র আছে ৪০ হাজার টাকার।


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম রায়হান। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। তার বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৩ লাখ। একটি মোটরসাইকেল যার মূল্য দেখিয়েছেন ৮৪ হাজার টাকা। ৩ ভরি স্বর্ণের মূল্য দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও আসবাবপত্র আছে ২ লাখ টাকার। একটি বসত বাড়ি আছে যার মূল্য দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার