নওগাঁর মান্দার মাছের জন্য বিখ্যাত মাইদাকোলা বিলে (জলাশয়ে) মাছ চাষের কাজে এক প্রভাবশালীর ছেলের অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার কারণে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ফুফু-ভাতিজার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার মাইদাকোলা বিলে (জলাশয়) এ দূর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে জলাশয় থেকে বিদ্যুতের সব তার সরিয়ে নেয়া হয়। এদিকে ফুফু-ভাতিজার এভাবে মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বড়পই পূর্বপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৪২) ও প্রসাদপুর ইউপি’র রফিকুল ইসলামের ছেলে রুমান (১১)। তারা সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা থেকে মাইদাকোলা বিল (জলাশয়) ইজারা নিয়ে মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা এমদাদুল হকের ছেলে ও উপজেলা সদরের চৌধুরীপাড়ার এলাকার মাহফুজুর রহমান (মাহফুজ) মাছ চাষ করছেন। মাইদাকোলা বিলের (জলাশয়) পূর্বপাশে একটি বেড়ার ছোট্ট ঘর তৈরি করে পিতার প্রভাবখাটিয়ে সেখানে আবার মিটার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়। রাতে জলাশয় আলোকিত করার জন্য সেখান থেকে লাইন টেনে সম্পূর্ন জলাশয়ে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মাইদাকোলা মাঠ থেকে ঘাস কেটে আম্বিয়া খাতুন ও রুমান বাড়ি ফিরছিলেন। এক পর্যায়ে রুমানের অজান্তে পানিতে থাকা বিদ্যুতের তারে হঠাৎ বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। এসময় ফুফু আম্বিয়া খাতুন তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গেলে তিনিও বিদ্যুৎপৃষ্ট হন। এতে ঘটনাস্থলে দুইজনেরই মৃত্যু ঘটে। দুপুর ১টার দিকে ঘটনা ঘটলেও ২টার দিকে এ ঘটনাটি জানাজানি হয়ও সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন। নিহত রুমান এর পিতামাতা ঢাকায় থাকায় সে তার ফুফুর সাথে বসবাস করতো।
বড়পই পূর্বপাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ, ইসমাইল ও অমির উদ্দিন সহ অনেকেই বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মাহফুজুর রহমান (মাহফুজ) অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে পানির নিচ দিয়ে সারা বিলে দিয়ে রেখেছে। ফুফু-ভাতিজা মাঠ থেকে ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার পথে অবৈধভাবে পানির নিচ দিয়ে রাখা বিদ্যুতের তারে দুইজনই মারা যায়। ঘটনার পর পাহারাদাররা তড়িঘড়ি করে বিল থেকে সব তার সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জলাশয়ের ইজারাদার মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত দেড় বছর থেকে জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছি। জলাশয়ে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নাই। যারা গুজব রটাচ্ছেন বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা গেছে যা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমরা রাজনৈতিক পরিবার হওয়ায় অনেক ব্যাপার থাকে। প্রতিপক্ষকরা বিভ্রান্ত ছড়াতেই পারে।
মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, জলাশয়ে আমাদের কোন অবৈধ সংযোগ নেই। যদি অবৈধ সংযোগ হয়ে থাকে আমরা তদন্ত করে সেটার ব্যবস্থা নেব।
মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, মান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে মাহফুজুর রহমান জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। জলাশয়ে তিনি রাতের আলোর ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখেন। মাঠ থেকে ঘাস কেটে ফেরার পথে আম্বিয়া খাতুন-রুমান বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়। রুমানের বাম হাতের পিছনে বিদ্যুৎপৃষ্টে পোড়ার কালো দাগ ও চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর জলাশয়ের পাহারাদাররা তারগুলো সরিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে নিহত দু’জনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।