অফ ফর্মের সৌম্য সরকারের ওপর আস্থা শেষ পর্যন্ত হারাননি কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু সৌম্য যেন সুযোগ কাজে লাগানোর চেয়ে কোচকে প্রশ্নের সামনে ফেলে দিয়েছেন বারবার। হাথুরুর কণ্ঠেও তাই ভর করেছিল হতাশা। গতকাল তো বলেই ফেললেন, ‘ওর (সৌম্যর) সমস্যা কী জানি না।’
কোচের ভারী কণ্ঠের মর্মার্থ হয়তো বেশ ভালো করেই বুঝেছেন সৌম্য। তাই আর দেরি করলেন না, নেলসনের সেক্সটন ওভালকেই বেছে নিলেন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে খেলেছেন ১৬৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ করেছে ২৯১ রান। অর্ধেকের বেশি রান তো এল সৌম্যর ব্যাট থেকেই।
অজস্র সমালোচনা যেন একটা ইনিংসে ‘ফুঁ’ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন সৌম্য। কত প্রশ্নের জবাবও আছে এই ইনিংসে। পাঁচ বছর পর এই সেঞ্চুরিতে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস ১২৭। ছাড়িয়ে গেছেন শচীন টেন্ডুলকারকেও।
ওপেনিংয়ে নেমে সৌম্য ফেরেন ৫০তম ওভারের প্রথম বলে। উইলিয়াম ও’রোয়ার্কের বলে আউট হওয়ার আগে ১৫১ বলে ১৬৯ রানে থামে তাঁর অসাধারণ ইনিংস। মেরেছেন ২২টি চার ও ২টি ছক্কার বাউন্ডারি। এই ইনিংস খেলার পথে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ান ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েন তিনি।
আগের রেকর্ডটি ছিল শচীনের। ২০০৯ সালে অপরাজিত ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি। এশিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে যেহেতু সবার শীর্ষে, সেহেতু না বললেও চলে যে জাতীয় দলের সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রেকর্ড দিয়েছেন তিনি। কিউইদের বিপক্ষে ২০১৫ সালে তাদের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে এত দিন অপরাজিত ১২৮ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
সতীর্থদের স্রেফ দর্শক বানিয়ে দেড় শ পেরিয়ে লিটন দাসের ১৭৬ রানের রেকর্ডে চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন সৌম্য, যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। যদিও এই বাঁহাতি ব্যাটার পারেননি লিটনকে টপকে যেতে। তবে তালিকায় সৌম্যর ইনিংসটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সৌম্য সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। প্রথম মেয়াদে তাঁর রুদ্ররূপ দেখে গিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। দ্বিতীয় মেয়াদে এসে পছন্দের শিষ্যকে কাছে পেতেও তাঁর বেশ সময় লেগেছিল। অফ ফর্মে থাকা সৌম্য তখন বাংলাদেশ দলের বাইরে।
তবু সৌম্যকে ভোলেননি হাথুরু। দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিন পরই জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পে ডেকেছেন প্রিয় শিষ্যকে। বিশ্বকাপের আগে এক এক করে মিরপুর একাডেমি মাঠের নেটে সব উইকেটে সৌম্যকে ব্যাটিং করিয়ে সমস্যা খোঁজারও চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ কোচ।
লম্বা সময় যখন দলের বাইরে, তখন হাথুরুই এ বছর ইমার্জিং এশিয়া কাপে সৌম্যকে রানে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সৌম্য সেরকম কিছুই করতে পারেননি। এর পরও সৌম্যর প্রতি আস্থা ছিল কোচের, চেয়েছিলেন বিশ্বকাপেও। তবে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে আবারও ব্যর্থ হন সৌম্য, যার কারণে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর।
কত সুযোগই না হেলায় শেষ করলেন সৌম্য। কিন্তু বিশ্বকাপের পরে নিউজিল্যান্ড সফরে যখন সিনিয়র ক্রিকেটারদের কয়েকজন নেই, তখন অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনায় তাঁকে আরও একটি সুযোগ দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এবার অবশ্য জাতীয় লিগেও ভলো রান করেছিলেন (৪৩৬)। সব মিলিয়ে তাঁকে দলে রাখার ব্যাপারে অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করার কথা জানিয়েছেন নির্বাচকেরা।
চোট ও নির্বাচনের কারণে সাকিব আল হাসান এড়িয়ে গেছেন নিউজিল্যান্ড সফর। তাই নিউজিল্যান্ডের পেস বোলিং কন্ডিশন বিবেচনায় সাকিবের অলরাউন্ড ভূমিকা পালন করতে সৌম্যকে নিয়ে গেছেন হাথুরু। ডানেডিনে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও সৌম্যকে সুযোগ দিয়েছেন কোচ। একটু দেরি হলেও জ্বলে উঠলেন সৌম্য।