ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই আওয়ামী লীগের: জিএম কাদের


, আপডেট করা হয়েছে : 23-12-2023

ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই আওয়ামী লীগের: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকতে হয়, তা না হলে ভালো নির্বাচন হয় না। তবে এটার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমাদের হাতে ছিল না। জাতীয় পার্টি এখন কোনো দোটানার মধ্যে নেই। আশা ও আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। আমরা আশাবাদী হতে চাই। আমাদের একটা ধারণা, আর যাই হোক আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানোর কোনো ঝুঁকি নেই। কাজেই আমাদেরকে, জনগণকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবেন। এখন জনগণ অংশগ্রহণ করবে কিনা- সেটা তাদের বিষয়।


তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য নির্বাচনে এসেছে। ভবিষ্যতে আমরা যদি মনে করি সেটা কার্যকর হচ্ছে না, আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না, তখন আমরা আমাদের পার্টির ফোরামে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।


শনিবার দুপুরে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি আয়োজিত নির্বাচনি কর্মিসভায় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এর আগে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর জন্য তিনি দুই দিনের সফরে রংপুরে আসেন।


জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানো ঝুঁকি এই মুহূর্তে নেই। কাজেই আমরা মনে করছি নির্বাচনটা ভালো করার জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। নির্বাচনে যাবার শর্ত এবং সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী ও দলের অনৈক্য দূর করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থাকা জাতীয় পার্টির জন্য লাভজনক। তবে আমাদের অপশনও আছে, যদি দেখি আমাদের শর্তমতে কার্যক্রম হচ্ছে না, তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করব।


এ সময় দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে জিএম কাদের বলেন, রংপুর আমার প্রাণের শহর। এখানে আমার শিশুকাল, শৈশবকাল, যৌবনকাল এবং জীবনের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে। এই শহরের কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। রংপুরবাসীর কথা কোনোদিন আমি মন থেকে দূরে রাখতে পারিনি। আমি অনেক জায়গায় গেছি, সারা দেশের মানুষ আপনাদের দোয়ায় এখন আমাকে চিনে-জানে। অনেকে আমার কাছে আসে এবং আমাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও করে। বিদেশের মানুষের কাছেও আমার পরিচিতি আছে। তারা আমার মতামত নেন, কথা বলেন এবং উপদেশও দেন। তারপরও আমার মন পড়ে থাকে রংপুরে। 


তিনি আরও বলেন, আমার মৃত্যুর পর আমার কবর রংপুরে হবে। আমার মা-বাবার কবরের পাশে আমাকে কবরস্থ করতে আমি পরিবারের সবাইকে বলেছি। আমার কবরের জায়গাও কিনে রেখেছি। আমি আমার প্রয়াত বড় ভাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো আপনাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব। সামনের দিনে আপনাদের অধিকার আদায়ের জন্য ভূমিকা রাখব। আপনাদের যেকোনো সমস্যার বিষয়ে যখন যেটা বলবেন আমি আপনাদের পাশে থাকব। আমি আপনাদের জন্য কাজ করব। 


রংপুরের মানুষ এরশাদভক্ত ও লাঙ্গল প্রিয় উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, চিরজীবন আমার পিঠের চামড়া দিয়েও আপনাদের ঋণ শোধ করতে পারব না। আপনারা আমার ভাই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমাদের পরিবারের জন্য যা করেছেন তা আজীবন মনে থাকবে। জেলে থেকে এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেছেন, আর আপনারা তাকে ভোট দিয়ে পাঁচটি আসনে নির্বাচিত করেছেন। এটা তো ইতিহাসের নজির।


সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জাতীয় পার্টির প্রত্যাশা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ডিমান্ড হলো প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশীশক্তি এবং অর্থের ব্যবহার ও প্রভাব থেকে নির্বাচনকে মুক্ত রাখতে হবে। নির্বাচন বিধিমালা মেনে চলতে হবে। এটা যদি তারা মেনে না চলেন তাহলে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। 


জিএম কাদের বলেন, আমরা পার্লামেন্টে থাকার জন্য নির্বাচন করছি। আমরা কোনো ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন করছি না। এটা কোনো মহাজোট হচ্ছে না। বিভিন্ন দলের ধারণা তৈরি হয়েছে আমরা জোট করেছি। আমাদের ক্যান্ডিডেটরাও অনেকেই ভুল করছেন। এটা ইলেকশন কমিশনের দেখা উচিত ছিল। আমরা আগে মহাজোটে ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই। এই নির্বাচন মহাজোটের নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেই ধরনের কোনো চুক্তিও করিনি।


কর্মিসভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর-৩ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এসএম ইয়াসিরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং রংপুর মহানগর ও জেলার সভাপতি এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক। 


এ ছাড়া বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সদস্য শাফিউল ইসলাম শাফী, জেলা যুব সংহতি সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মহানগর ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফ, সভাপতি আমিনুল ইসলামি ছোট, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জসিম, জেলা ছাত্র সমাজ আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক মাহবুবার রহমান বেলালসহ মহানগর, ওয়ার্ড ও জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার