প্রায় দেড় দশক ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। কখনো ঠিমেতালে কখনো জোর বেগে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে দলটি। তবে সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো আঘাত এলেই রাজনীতির মাঠ ফাঁকা রেখে যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যান দলটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা।
এবারও ওই অনুশীলনের ব্যত্যয় ঘটেনি। গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশে সংঘাতকে কেন্দ্র করে প্রশাসন কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে মাঠ ছেড়ে চলে যান দলটির নেতাকর্মীরা। এর পর আড়াই মাস কেটে গেলেও এখনও স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারেনি বিএনপি।
বিএনপির প্রায় ৬০০ সদস্যের ঢাউস কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ নেতা কোথায় আছেন জানেন না দলটির নেতাকর্মীরা। অনেকে গত আড়াইমাসে তৃণমূলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই রাখেননি। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাত্র ৬৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিদের বেশিরভাগই এখনও আত্মগোপনে। তাদের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতারা।
বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের যথেষ্ট অভিযোগ ছিল। এবারও আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ঠেকাতে তাদের ভূমিকা চোখে পড়েনি। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবাসী নির্বাচন বয়কট করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সব জায়গায়ই গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজনৈতিক সঙ্কটে নেতাদের অনুপস্থিতি ভালোভাবে নিচ্ছে না তৃণমূল। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে—আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের মারমুখী আচরণে তারা প্রকাশ্যে নির্বাচন বানচালে ভূমিকা রাখতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে কর্মী-সমর্থকদের মাঠে রেখেছেন। গ্রেফতার এড়াতে তারা আত্মগোপনে ছিলেন। কারণ ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপিকে মাঠে দাঁড়াতে কোনো স্পেস দেয়নি পুলিশ-র্যাব-আইনশৃংখলা বাহিনী। যাকে যেখানে পেয়েছে তাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে— এমনটিই দাবি করে আসছিল বিএনপি। নির্বাচনের দিন দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, বিএনপির ১৩ হাজার ৪২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪৯৯ মামলার এফআইআরে দলটির ৫২ হাজার ৩৪২ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা ৬৩ শীর্ষ নেতার মুক্তি চেয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি কারাবন্দি নেতাদের যে তালিকা দিয়েছেন সেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬৩ জনের নাম রয়েছে।
তাদের মধ্যে আছেন— দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী; ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু ও আব্দুস সালাম পিন্টু; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আতাউর রহমান ঢালী; যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন ও আসলাম চৌধুরী; মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন; সদস্য সচিব ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন—স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। সহ-সম্পাদকদের মধ্যে কারাগারে আছেন— সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পদাক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-গ্রামসরকার বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদ, সাইয়েদুল আলম বাবুল, শেখ রবিউল আলম রবি, আবুল হোসেন খান ও ফজলুর রহমান খোকনও কারাগারে রয়েছেন।