নৌকা প্রতীক না থাকায় খুশি তৃণমূল, ভিন্নমতও আছে


, আপডেট করা হয়েছে : 24-01-2024

নৌকা প্রতীক না থাকায় খুশি তৃণমূল, ভিন্নমতও আছে

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের মতে, দলের এই সিদ্ধান্তে তৃণমূলের পোড়খাওয়া জনপ্রিয় নেতাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে তাঁদের হতাশ করে নৌকা প্রতীক পাওয়ায় হঠাৎ রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ব্যক্তিরাও জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।


অবশ্য আওয়ামী লীগেরই কিছু নেতা মনে করছেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের অনুসরণে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। আবার কারও কারও মতে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতেই এই কৌশল।


গত সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আপাতত দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক (নৌকা) ব্যবহার না করার অভিমত দিয়েছে কার্যনির্বাহী কমিটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এতে একমত পোষণ করেছেন।


আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দেশে একসময় স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। তবে ২০১৫ সালে আইন পরিবর্তনের পর কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্য পদ ছাড়া বাকিগুলো দলীয় মনোনয়নে হচ্ছে। এতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে হঠাৎ রাজনীতিতে আসা ব্যক্তিরাও নৌকা প্রতীক পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন পোড়খাওয়া অনেক তৃণমূল নেতা। এ কারণে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।


স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলেছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতীক দেওয়ার কারণে অনেক কর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে সরে গেছেন। আবার অনেক অরাজনৈতিক ব্যক্তি প্রতীক নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। এ জন্য প্রতীক না দেওয়া ভালো।


নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না বলে মনে করেন দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা। তিনি বলেন, ‘দলের বাইরের মানুষকে সম্পৃক্ত (নির্বাচন) করার জন্য দল যে কৌশল নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই।’


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছি বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যারা আছে, তারা এ নির্বাচনে (স্থানীয় সরকার) আসবে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে আরও প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করতে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা জনপ্রিয়, তারা নিজ যোগ্যতা প্রমাণ করে নির্বাচন করে আসুক। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব বের হবে, একই সঙ্গে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, সেটাও দূর হবে।’


আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ৯ পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না বলেও জানান খায়রুজ্জামান লিটন। এসব নির্বাচনের তফসিল সোমবার ঘোষণা হলেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানায়নি আওয়ামী লীগ। অতীতে তফসিল ঘোষণার দিনই দল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের আহ্বান জানানো হতো।


২০১৫ সালে আইন করার পর ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনের আগেও নৌকা প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের দাবি তুলেছিল দলটির একটি অংশ। তবে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তা অনুমোদন হয়নি।


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও দেশে ওই পর্যায়ের নির্বাচন হতে অনেক সময় লাগবে। যুক্তরাজ্যে দলীয় প্রার্থী এক বছর আগেই নির্ধারণ করা হয়। আর বাংলাদেশে তফসিল ঘোষণার পরে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। ফাঁকফোকর গলে অনেক অরাজনৈতিক, টাকাওয়ালারা দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন।


খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য একটা জায়গায় একাধিক প্রার্থী থাকতে পারেন। কিন্তু সবাই তাকিয়ে থাকেন ওপরের দিকে। একজনকে দিলে বিভেদ সৃষ্টি হয়। উন্মুক্ত করে দিলেও যোগ্য ও জনপ্রিয়রাই প্রার্থী হবেন।


হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নৌকা প্রতীক না থাকলে বেশি প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবেন। মানুষ সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে পারবে।


তবে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক। তিনি বলেন, অতীতে দলীয় প্রতীক দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন আবার না দেওয়ার সিদ্ধান্তও ঠিক হয়নি। তবে এ সিদ্ধান্তে অসুবিধা হবে না। বিভেদ হলে কাটিয়ে উঠতে পারবেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার