প্যাকেটে ঢুকলেই দাম বাড়ে


, আপডেট করা হয়েছে : 24-01-2024

প্যাকেটে ঢুকলেই দাম বাড়ে

প্যাকেট বা মোড়কজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর নির্দিষ্ট আইন থাকলেও দেশের উৎপাদনকারী বা মোড়কজাতকারী কোনো প্রতিষ্ঠানই তা মানছে না। ওই আইন বা বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)। কিন্তু সরকারি সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ আছে।


নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে যেকোনো মোড়কজাত পণ্যের দাম বাড়ানো বা পুনর্নির্ধারণ করা হলে বিধান অনুযায়ী ভোক্তাকে অবহিত করতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। একই সঙ্গে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালককে নোটিশ দিয়ে অবহিত করতে হয়। কিন্তু এই বিধান কেউ মানছে না।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই বছর আগেও প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চালের খুচরা মূল্য ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা; গত বছর তা বিক্রি হয় ১৩৫-১৪০ টাকায়; বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম দুই বছর আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা; গত বছর ছিল ৭০-৭৫ টাকা; চলতি বছর ৫৫-৬৫ টাকা।



২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫০-১৬০ টাকা; ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১৮৭-১৯০ টাকা; বর্তমানে ১৭০-১৭৩ টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ছিল ৮৫ টাকা; ২০২৩ সালে ছিল ১১৫ টাকা; বর্তমানে ১৪৫ টাকা।


একইভাবে প্যাকেটজাত চাল, ডাল, প্রসাধনী, সাবান, গুঁড়া দুধ, ডিটারজেন্ট পাউডার, বিস্কুট, পাউরুটিসহ নানা পণ্যের দাম কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছে। আইন লঙ্ঘন করে প্যাকেটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ানোয় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


২০১৮ সালে ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন এবং ২০২১ সালে পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা করা হয়। ওই বিধিমালার ২১ বিধির উপবিধি (৩)-এ বলা আছে, কোনো পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে মোড়কজাত করার পর ওই পণ্যের ওপর আরোপিত কর পুনর্নির্ধারিত হলে উৎপাদনকারী বা মোড়কজাতকারী সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য পুনর্নির্ধারণ করলে এর অধিক মূল্যে কেউ সেই পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। 


উপবিধি (৪)-এ বলা আছে, উৎপাদনকারী বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোড়কজাতকারীকে উপবিধি (৩)-এর অধীন মোড়কজাত পণ্যের মূল্য পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত বিষয়টি অন্তত দুটি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। ভোক্তাদের অবহিত করতে হবে এবং বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নোটিশ জারির মাধ্যমে এরূপ মোড়কজাত পণ্যের মূল্য পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি অবহিত করতে হবে।


অনুরূপভাবে মোড়কজাত পণ্যের মূল্য পুনর্নির্ধারণ কোনোক্রমেই সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর পুনর্নির্ধারিত কর বা নতুনভাবে আরোপিত করের চেয়ে বেশি হবে না।


মোড়কজাত বিধিমালা অমান্য করলে ২০১৮ সালের ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইনের ৪১ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রণীত বিধির বিধান লঙ্ঘন করে মোড়কজাত আকারে যেকোনো পণ্য বিক্রি, পরিবেশন, সরবরাহ বা হস্তান্তর অথবা পরিবেশন বা সরবরাহের ব্যবস্থা করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 


এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে আইন অনেক থাকলেও বেশির ভাগ সময়ই তা মানা হয় না। আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। ওজন ও পরিমাপ আইন এবং বিধিমালা বাস্তবায়ন করতে বিএসটিআইকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।


এ প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের সদ্য বিদায়ী পরিচালক (মেট্রোলজি) সাজ্জাদুল বারী বলেন, তাঁর আড়াই বছর দায়িত্ব পালনকালে একমাত্র নেসলে বাংলাদেশ মূল্য পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি বিএসটিআইকে অবহিত করে এবং দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়। অন্য কোনো কোম্পানিই এই আইন বা বিধিমালা মানছে না।


সাজ্জাদুল বারী আরও বলেন, ইউনিলিভার সাবান, প্রসাধনী সবকিছুর দামই অনেকটা বাড়িয়েছে কিন্তু মোড়কজাত বিধিমালা মানছে না। এখন যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মোড়কজাত বিধিমালা অমান্য করার বিষয়টি নিয়ে বিএসটিআই কিংবা কোনো ভোক্তার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে আইন পালনকারী কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পরে ধরতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাঁর মতে, ৩২ টাকার সাবান কীভাবে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার