দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই দলের মুখেই ভারত


, আপডেট করা হয়েছে : 29-01-2024

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই দলের মুখেই ভারত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ভোটের আগে কিংবা পরপর বিএনপির নেতারা আড়ালে-আবডালে নানা অভিযোগ করলেও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান এই দলের দু-একজন নেতা আকারে-ইঙ্গিতে কিছু সমালোচনা অবশ্য করেছেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একরকম নিশ্চুপই ছিল। অবশেষে দুই দলই নির্বাচনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এনেছে।


বিএনপি বর্তমান সরকারকে সরাসরি ‘ভারত, চীন ও রাশিয়ার সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এর ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার বলেছেন, কিছু বিদেশি শক্তি ও বিএনপি নির্বাচন ভন্ডুল করতে চেয়েছিল। তখন ভারত এসে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।


আগের দিন রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এই সরকার ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার। তাই আমরা এই সরকারকে মানতে বাধ্য নই।’


ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা গতকাল সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওবায়দুল কাদের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারত সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেছে। যেটা প্রয়োজন ছিল।’ এ ক্ষেত্রে বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দলের পাশাপাশি কতিপয় ‘বন্ধু’রাষ্ট্রের ভূমিকার ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘এ দেশে কিছু কিছু অপজিশন কোনো কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের এখানে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল, নির্বাচনটাকে ভন্ডুল করতে চেয়েছিল। সে সময় ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।


সে কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সংশয় আর অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভবিষ্যতেও ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে চিড় ধরার কোনো কারণ দেখছি না।’


ভোটের আগে ২২ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নির্বাচনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দিল্লিই আসলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভাগ্য ছিনিয়ে নিয়েছে।’


২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বেশি কথা হয়েছিল। ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের (প্রয়াত) সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। জাপাও প্রথমে বর্জন করার কথা বলেছিল। সুজাতার সঙ্গে বৈঠকের পরে দলটির অবস্থান বদলাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দশম সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে জাপা।


২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নানা কথা উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। রাজনীতি-বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের দূতিয়ালির কারণেই ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধীরা অংশ নিয়েছিল। পরে অবশ্য বিরোধীরা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। তারা বলেছিল, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। তবে নির্বাচনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছিল চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ। দ্বাদশ নির্বাচনের পরেও একইভাবে তারা শুরুতেই অভিনন্দন জানিয়েছিল।


এদিকে ওবায়দুল কাদের গতকাল ভারতকে জড়িয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সে প্রসঙ্গে রাজনীতি ও কূটনীতি-বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত ১৫ বছরে কৌশলগত কারণে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেক এগিয়েছে। ভারতের সরকারি মহলে আগে থেকেই এমন উপলব্ধি ছিল যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাদের জন্য ভালো হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে সেই সম্পর্কেরই প্রতিফলন ঘটেছে। এখানে নতুন কিছু নেই।


এ বিষয়ে সাবেক এক পররাষ্ট্রসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে বলার কী আছে? ভারত তো আমাদের এখানকার যেকোনো বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেই।’


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য আওয়ামী লীগের আগের অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ। এখানে আমি নতুনত্ব দেখছি না।’


নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টাসংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অবশ্য দ্বিমত পোষণ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছে। এ নিয়ে তারা একধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার