পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে আধুনিক সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে


, আপডেট করা হয়েছে : 29-01-2024

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে আধুনিক সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে

ইউনেস্কো স্বীকৃত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার আধুনিক মানের সড়কের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। শত বছরের ঐতিহাসিক এই নিদর্শন দর্শনে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের এতোদিন ঝুঁকিপূর্ণ সরু রাস্তা দিয়ে বৌদ্ধ বিহারে যেতে হতো। অনুপযোগী রাস্তার পরিবর্তে দ্রুতই প্রস্তাবিত আধুনিক মানের মহাসড়কটির নির্মাণ চায় বৌদ্ধ বিহারে যাওয়া পর্যটকরা। 

পর্যটন খাতকে আরও এগিয়ে নিতে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই। সেই প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এবং নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হকের প্রচেষ্টায় নির্মাণ হতে যাচ্ছে একটি আধুনিকমানের সংযোগ সড়ক।


এই সড়কটি নির্মিত হলে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি আরও বিকশিত হবে। দ্বিগুণ সংখ্যক পর্যটকদের আগমন ঘটবে এই বৌদ্ধ বিহারে। আর সরকারের খাতায় যুক্ত হবে অধিক পরিমাণ রাজস্ব এবং নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠবে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা। তাই সড়ক নির্মাণের সেই পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন চায় বৌদ্ধ বিহারে আসা শত শত পর্যটক। 


নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, ইতিমধ্যেই নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহারে আসার জন্য আধুনিক মানের একটি সড়ক নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। নতুন এই সড়কটি প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহারের পশ্চিম-উত্তর দিকে যুক্ত হবে। আর এই সড়কের মাধ্যমেই পর্যটকরা বৌদ্ধ বিহারের শতাধিক বছরের আগের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে দর্শন করবেন এই নিদর্শনটি।


নতুন সড়কের সংযোগস্থলে থাকবে পর্যাপ্ত গাড়ি, পাকিং সুব্যবস্থা, কাফেটেরিয়া, পর্যটকদের চলাচলের জন্য ফুটপাত, মার্কেট, চালকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা, ভিআইপিদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সকল কিছুই। 

ইতিমধ্যেই সড়ক নির্মাণের জন্য সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, এমন ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানে যেতে মরণফাঁদের মতো একটি রাস্তা পার হতে হয় সেটি আমার জানা ছিল।


জীবনের প্রথম বৌদ্ধ বিহার দর্শন করতে গিয়ে বিষয়টি আমার নজরে আসে। তখনই আমি বৌদ্ধ বিহারে যাওয়ার জন্য একটি আধুনিক মানের সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এরপর বিহারের সহকারী পরিচালকের সহযোগিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচশ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি আধুনিক মানের সড়ক নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছি। সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের আবেদন জেলা প্রশাসন বরাবর প্রদান করেছি।


যত দ্রুত জমি অধিগ্রহণ পাব তত দ্রুতই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করব। আমি আশাবাদী সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই আধুনিক যোগাযোগে ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারব ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহারটিকে। 

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুল করিম আরজু বলেন, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিহার এই পাহাড়পুর। এর আদি নাম সোমপুর বিহার। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এটি মূলত পাল রাজ্যত্বের রাজধানী এবং সেই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।


এখানে সে সময় ভিক্ষুরা পড়ালেখা করত। এখানে সারাবছর দেশ ও বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। এই বিহারটিকে পর্যটকবান্ধব ও আধুনিকায়ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা নানাবিধ পরিকল্পনা ইতিমধ্যই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান সড়ক থেকে বৌদ্ধ বিহারে আসার একটি আধুনিকমানের সড়ক না থাকার প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।


প্রধান সড়ক থেকে পুরনো একটি সরু আড়াই কিলোমিটারের যে রাস্তা রয়েছে সেই রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি বাঁকের কারণে বিভিন্ন উৎসবে যানজটের সৃষ্টি হলে যানবাহন অনেক দূরে রেখে পর্যটকদের হেঁটে আসতে হয়। এ ছাড়া মোড় ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে অনেকটাই নিয়মিত। প্রতিনিয়তই এই অনুপযোগী রাস্তার বিষয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেতে হয়। একটি আধুনিক মানের প্রশস্ত সড়কের অভাবে বছরের পর বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার