চার কারণে পূরণ হলো না এ বছরের হজের কোটা


, আপডেট করা হয়েছে : 07-02-2024

চার কারণে পূরণ হলো না এ বছরের হজের কোটা

পাঁচ দফা সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় ৪৪ হাজার ২৩২টি কোটা খালি রেখেই হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি-বেসরকারি নিবন্ধিত হজযাত্রীদের সংখ্যা জানিয়ে সৌদি সরকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। 


হজ চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু গতকাল শেষ দিন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৮২ হাজার ৯৬৬ জন হজযাত্রী। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ২৬০ জন। আর বেসরকারিভাবে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৭৮ হাজার ৭০৬ জন। ফলে কোটা ফাঁকা থাকল ৪৪ হাজার ২৩২টি। 


কোটা ফাঁকা থাকলেও নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী। এবার হজের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া না মেলায় কয়েক দফায় ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এতেও কোটা পূরণ না হওয়ার জন্য মোটা দাগে চারটি কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণগুলো হলো হজ প্যাকেজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, জাতীয় নির্বাচনের কারণে হজে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা, ওমরাহকে হজের বিকল্প মনে করা এবং নিত্যপণ্যের বাজার চড়া থাকা। 


কেন এমন পরিস্থিতি হজ ব্যবস্থাপনায়, এ প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি সরকারের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারে যান নাকি? আলু, পেঁয়াজ ও সবজি কেনেন? অনেকে হজের টাকা ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। কারণ, হজের চেয়ে পরিবার-পরিজনকে খাওয়ানো বড় দায়িত্ব। সেটাই ফরজ।


এ বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই একমত বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব এবং হজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানতে চাইলে হাব সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হজের সিদ্ধান্ত সাধারণত পারিবারিকভাবে নেওয়া হয়। নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ এবার হজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। আরেকটি হলো, অনেকে ওমরাহকে হজের বিকল্প মনে করেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির দুই বছর পর সীমিত পরিসরে হজ চালু হলেও, সেখানে বয়সের শর্ত আরোপ করে সৌদি সরকার। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হজের খরচ। এতে হজের বদলে ওমরাহর দিকে ঝুঁকে পড়েন বয়স্ক হজযাত্রীরা। 


তবে হাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদ আহম্মেদ মজুমদার মনে করেন, হজ প্যাকেজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিও নিবন্ধন কম হওয়ার বড় কারণ। তিনি বলেন, একই দূরত্বে ওমরাহয় বিমান ভাড়া ৭০-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু হজের বিমান ভাড়া দুই লাখ টাকা গুনতে হয়। তাই অনেকে হজের বদলে ওমরাহ করতে যান। 


এ ছাড়া হজ এজেন্সির কয়েকজন মালিক জানান, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। নিত্যপণ্যের দাম এতই বেড়েছে যে, যাঁদের হজ ফরজ হয়েছিল, তাঁরা এখন সেই অবস্থানে নেই। অনেকে হজের জমানো টাকা ভেঙে সংসারের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। 


চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন হজ হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা গতবারের তুলনায় ৮২ হাজার ৮১৮ টাকা কম। সরকারি সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। বেসরকারি সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার