ছেলের টেস্ট ক্যাপে চুমু খেয়ে কাঁদলেন বাবা


, আপডেট করা হয়েছে : 15-02-2024

ছেলের টেস্ট ক্যাপে চুমু খেয়ে কাঁদলেন বাবা

পরিশ্রম, ত্যাগ আর অপেক্ষার অনেক পথ পেরিয়ে অবশেষে ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলো সারফারাজ খানের; আবেগের স্রোতে ভাসলেন তার বাবা কোচ নাওশাদ খান।


ম্যাচ শুরু হওয়ার আগের ছোট্ট আনুষ্ঠানিকতা তখন শেষ। স্বপ্নের টেস্ট ক্যাপটি নিয়ে সারফারাজ খান ছুটলেন মাঠের সীমানা দড়ির বাইরে একপ্রান্তে। সেখানে অপেক্ষায় তার বাবা কোচ নাওশাদ খান। ছেলে গিয়ে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিলেন বাবার হাতে। আবেগাপ্লুত বাবা ক্যাপ নিয়ে চুমু দিলেন বোর্ডের প্রতীকে। তার চোখ বেয়ে নামছে অশ্রু। আলিঙ্গনে জড়ালেন দুজনে গভীর মমতায়।


রাজকোটে বৃহস্পতিবার ভারত-ইংল্যান্ড তৃতীয় টেস্ট শুরুর আগে দেখা গেল স্বর্গীয় এ দৃশ্য। 


এই বাবা-ছেলের গল্প যারা জানেন, এমন আবেগের কারণও তাদের না বোঝার কারণ নেই। কত পরিশ্রম, কত ত্যাগ, ঘাম ঝরানোর কত প্রহর আর কত দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ দিনটি এসেছে তাদের জন্য!


ছেলেকে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নাওশাদ খানের এই লড়াই মুম্বাই তথা ভারতীয় ক্রিকেটেও কিংবদন্তি হয়ে আছে। মুম্বাইয়ের ক্রিকেটে একটা পরিচিতি তার আগেই ছিল কোচ হিসেবে। পরে উঠেপড়ে লাগেন তিনি নিজের ছেলেকে নিয়ে। ছেলে সারফারাজও ভারতীয় ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেয় কিশোর বয়সেই।


সেই ২০০৯ সালে যখন সারফারাজের বয়স ১২ বছর, হারিস শিল্ডের এক ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৪২১ বলে ৪৩৯ রানের ইনিংস। পেছনে পড়ে যায় শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড। এরপর বয়সভিত্তিক ক্রিকেট রাঙিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন সারফারাজ। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাকে ঘষেমেজে তৈরি করার লড়াই চলতে থাকে বাবার।


বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও পারফর্ম করেন সারফারাজ। গত কয়েক বছরে তো দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য। বিশেষ করে রঞ্জি ট্রফিতে সাম্প্রতি বছরগুলোয় তার পারফরম্যান্স তো চোখ কপালে তোলার মতো। 


কিন্তু টেস্ট দলের দুয়ার খুলছিল না। এটা নিয়ে তার কণ্ঠে অভিমানের সুর ফুটে উঠেছে নানা সময়ে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত উঠে এসেছে তার ‘বঞ্চনার’ গল্প। তাকে উপেক্ষা করা বা তাকে দলে না নেওয়ার কথা উঠে এসেছে ভারতীয় সাবেকদের কণ্ঠেও।


এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজেও এক দফা হতাশ হতে হয় তাকে। বিরাট কোহলি বিরতি নেওয়ার পর দলে নেওয়া হয় রাজাত পাতিদারকে। এরপর ইংল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ১৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান হয় দ্বিতীয় টেস্টের আগে। এবার লোকেশ রাহুলের চোটে স্কোয়াডে ডাক পান সারফারাজ।


রাজকোটে টেস্ট শুরুর আগে সারফারাজকে ক্যাপ পরিয়ে দেন কিংবদন্তি অনিল কুম্বলে। টেস্ট অভিষেকের স্বাদ পান এ দিন কিপার-ব্যাটসম্যান ধ্রুপ জুরেলও। যথারীতি সেখানে ছিল ছোট্ট বক্তৃতাপর্ব। তালি দিয়ে দুই নবীনকে দলে স্বাগত জানান সতীর্থরা। এরপরই সারফরাজ ছুটে যান তার বাবার কাছে।


২৬ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যানের স্ত্রীও ছিলেন সেখানে। তার স্ত্রীর চোখও তখন ছিল অশ্রুসিক্ত। 


একটি অপেক্ষা শেষ হওয়ার পর বাবা নাওশাদ খানের নতুন অপেক্ষার শুরু তার আরেক ছেলেকে নিয়ে। সারফারাজের ছোট ভাই মুশির খানও উঠে আসছেন। সদ্য সমাপ্ত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৬০ গড়ে ও ৯৮ স্ট্রাইক রেটে ৩৬০ রান করেছেন তিনি, যা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৮ বছর বয়সি মুশির বাঁহাতি স্পিনও করেন বেশ ভালো।

 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার