গ্রামীণের ৭ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে আইন মেনেই


, আপডেট করা হয়েছে : 19-02-2024

গ্রামীণের ৭ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে আইন মেনেই

আইন মেনেই গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ। এসব প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই বলে তিনি জানান।


 


এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানা দাবি করা প্রায় ৫১টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে। এসব প্রতিষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই। তবে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ গ্রামীণ ব্যাংক ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শত শত কোটি টাকার অর্থ পাচার করেছেন ইউনূস। অর্থ পাচারের এসব তথ্য এক নিরীক্ষায় উঠে এসেছে বলে দাবি করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ।


 


গতকাল রাজধানী মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, তাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান তিনি ব্যবসার মুনাফা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ড. ইউনূসের সেই অভিযোগের জবাব দিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন ডাকে গ্রামীণ ব্যাংক।


 


নব্বইয়ের দশকের গ্রামীণের অনেক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ নথিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান। সাত মাস ধরে চলা নিরীক্ষায় অনিয়মের নানা তথ্য ও প্রমাণ তারা পেয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।


সাইফুল মজিদ বলেন, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ শক্তি নামের প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভার অনুমোদনে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৎকালীন গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন কর্মরত কর্মকর্তারা গঠন করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে খোদ ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত এসব প্রতিষ্ঠান গঠন ও অর্থায়ন সম্পর্কিত গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্টসংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া হয়।


তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য আমরা একটি কম্প্রিহেনসিভ অডিট (ব্যাপক নিরীক্ষা) করিয়েছি। নিরীক্ষায় বিভিন্ন কাগজপত্র ও অর্থসংক্রান্ত নথিগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ড এসব প্রতিষ্ঠান গড়তে গিয়ে ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা সরিয়েছেন, যার প্রমাণও আমাদের হাতে রয়েছে।’


মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণের অনেক প্রতিষ্ঠানের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে দাবি করে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক টাকা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরে গেছে। সেটা আমরা অনুসন্ধান করছি, অনেক আলামত সংগ্রহ করেছি। অনেক তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে অথবা নেই বা ধ্বংস করা হয়েছে। পূর্ণ তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষারোপ করছি না।’


তিনি বলেন, গ্রামীণের অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল, ওই সময়ে কোনো খতিয়ান খুঁজে পাননি তারা। সে জন্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তারা চান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেন সেগুলো ফেরত দেন।


১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ভবনে অবস্থিত আটটি অফিস দখল করে নেওয়া হয় বলে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ব্যবসার মুনাফার টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় হয়নি।


তবে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ দাবি করেন, ড. ইউনূস ব্যবসার মুনাফা দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান করেননি। এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফার জন্য নয়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন কর্মকর্তা ছিলেন।


গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ ফান্ডসহ প্রায় ৫১টি প্রতিষ্ঠানের সবগুলোই কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়েছে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পর্ষদ সভাকে অবহিত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনে থাকা ধারার ক্ষমতাবলে তারা সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের চিঠি পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে তিনটির চেয়ারম্যান পরিবর্তন করেছেন, কয়েকটিতে পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. ইউনূস এবং পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তারই বাছাই করা অল্প কিছু লোক, যাদের তিনি এতগুলো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন।


গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানান, গত সোমবার গ্রামীণ ব্যাংকের ১৫৫তম বোর্ড সভায় সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্টসংখ্যক পরিচালক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন মেনে করা হয়েছে। এখানে কোনো বেআইনি বা নিয়মবহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।


গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের আটটি প্রতিষ্ঠান দখল করেছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেন সাইফুল মজিদ। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪২তম সভায় কোম্পানি আইনের আলোকে ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে গ্রামীণ কল্যাণ গঠিত  হয়। বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণদানের জন্য গ্রামীণ ব্যাংককে অনুদান হিসেবে দেওয়া ৪৪৭ কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) থেকেও ৪৪ কোটি টাকা গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করা হয়।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার